
সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য-কৃষি | জাতীয় সংবাদ | বক্স্ নিউজ | রংপুর | রাজনীতি | শিরোনাম » মানুষ না কেনায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি ব’ন্ধ
মানুষ না কেনায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি ব’ন্ধ
Bijoynews :
আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ এবং দেশি পেঁয়াজে’র দাম সমান হওয়ার কারণে ক্রেতারা ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ কিনতে চাচ্ছেন না। এ কারণেই বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজে’র চাহি’দা কমে গেছে। আর চাহি’দা কমে যাওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি ব’ন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানি ব’ন্ধ থাকলেও দেশের বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে কোনও ধ’রনের স’মস্যা তৈরি হবে না। কারণ দেশে এখন পেঁয়াজে’র ভরা মৌসুম। ব্যবসায়ীদের স’ঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জা’না গেছে।
পেঁয়াজে’র ওপর ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতে উৎপাদিত পেঁয়াজে’র দাম এখন সমান। দুদেশের পেঁয়াজে’র দামে কোনও পার্থক্য নাই। স্বাদে অতুলনীয় বলে ক্রেতাদের আগ্রহ দেশি পেঁয়াজে’র প্রতি। আপাতত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি ব’ন্ধ ক’রেছেন সেখানকার আমদানিকারকরা। তবে ঘো’ষণা না দিলেও দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়েও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের বাজারে আ’সছে না বলে জনিয়েছে বাংলাদেশ স্থল বন্দর ক’র্তৃপক্ষ।
ক’র্তৃপক্ষ জা’নান, দাম যদি দেশি পেঁয়াজে’র তুলনায় আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজে’র বেশি হয় বা সমান হয়, তাহলে কি কারণে ক্রেতারা তা কিনবেন? যেকোনও বিচারে আমদানি করা পেয়াজে’র তুলনায় দেশি পেঁয়াজ উত্তম।
উল্লেখ্য, দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজে’র চাহি’দা না থাকায় গত ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কোনও পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। একইস’ঙ্গে দেশের বেনাপোল ও ভোম’রা স্থলবন্দর দিয়েও কোনও ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে না।
ভারতে পেয়াজে’র মূল্য, পরিবহন খরচ ও বাংলাদেশের ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক যুক্ত করে বর্তমানে ভারত থেকে আমদানির পর প্রতিকেজি পেঁয়াজে’র দাম দাড়ায় ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা। কিন্তু দেশের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে। পাইকারি ও খুচরা ব্যাবসায়ীর মুনাফা ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে তা বাজার থেকে ক্রেতা কিনছেন সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি দরে।
অপরদিকে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা কেজি দরে বর্ডার থেকে কিনে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে এনে তার পরিবহন খরচ ও পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মুনাফা মিটিয়ে ভোক্তার কাছে বিক্রি ক’রতে হবে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা কেজি দরে। তাই এ ব্যবসা কেউ ক’রতে চাচ্ছেন না। সাধারণত দেশি পেঁয়াজে’র দামের তুলনায় আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজে’র দাম প্রতি কেজিতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ টাকা কম না হলে ভোক্তারা ভারতীয় পেয়াজ কিনতে চান না।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশের বাজারে দেশীয় পেঁয়াজে’র পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। ভারতের পেঁয়াজ আমদানিতে লোকসানের সম্ভবনা দেখছেন আমদানিকরাকরা। সে কারণেই আপাতত পেঁয়াজ আমদানি ব’ন্ধ করে দিয়েছেন আমদানিকারকরা।
এ প্রস’ঙ্গে জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানি গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জা’নিয়েছেন, বর্তমানে দেশি পেঁয়াজে’র সরবরাহ প্রচুর। চাহি’দার দিক থেকে দেশি পেঁয়াজে’র চাহি’দা ব্যা’পক। চাহি’দার তুলনায় সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় দেশে পেঁয়াজে’র দাম এমনিতেই কম। অপরদিকে পেঁয়াজ আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার ফলে বর্তমানে ভারতীয় পেয়াজে’র দাম দেশি পেঁয়াজে’র দামের তুলনায় বেশি হওয়ায় লোকসান ঠে’কাতে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি করছে না। তবে আগামী মাস থেকে আবার পেঁয়াজ আমদানি শুরু হবে। কারণ তখন দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজে’র সরবরাহ কিছুটা কমবে। এই সুযোগে আমদানি শুল্ক মিটিয়েও ব্যবসায়ীরা কিছুটা মুনাফা পাবেন। ফলে বর্তমানে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজে’র কোনও আমদানি নেই। মৌসুমের প্রথম কয়েকদিন বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হলেও বর্তমানে কোনও পেঁয়াজ আ’সছে না বলে জা’নিয়েছেন তিনি।
এ প্রস’ঙ্গে বাংলাদেশ স্থলবন্দর ক’র্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কে এম তারিকুল ইসলাম জা’নিয়েছেন, শুল্কারোপের ফলে আদানি করা পেঁয়াজে’র দাম বেশি পড়ছে। অপরদিকে দেশি পেঁয়াজে’র উৎপাদন, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দাম কম। ফলে ভোক্তাদের আমদানি করা পেঁয়াজে’র প্রতি আগ্রহ নেই মোটেই। কম দামে দেশি পেয়াজ কিনছেন ভোক্তারা। চাহি’দা কমে যাওয়ায় লোকসানের আশ’ঙ্কা করছেন আমদানিকারকরা। তাই তারা পেঁয়াজ আমদানি ব’ন্ধ রেখেছেন।
জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জা’নিয়েছেন, দেশের পেঁযাজে’র বাজারে কোনও স’মস্যা বা জটিলতা বা কোনও ধ’রনের অস্বস্তি তৈরি হবে না। কারণ বাজারে দেশি পেঁয়াজে’র পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। দাম কম না হয়ে, বেশি হওয়ায় বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজে’র চাহি’দা কমে গেছে। সে কারণে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানি করছেন না। এতে কোনও স’মস্যা নাই। দেশে পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজে সরবরাহ রয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশে পেঁয়াজে’র বাৎসরিক চাহি’দা ২৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশে পেঁয়াজে’র উৎপাদন কমবেশি ২৫ থেকে ২৬ লাখ টন। কিন্তু পেঁয়াজ পচনশীল বলে উৎপাদিত পেঁয়াজে’র ২২ থেকে ২৫ শতাংশ প্রসেস লস বাদ দিয়ে মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ১৯ থেকে ২০ লাখ টন। চাহি’দার তুলনায় বাৎসরিক ঘাটতি সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭ লাখ টন। এই পরিমান ঘাটতি মে’টাতেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে তা আমদানি ক’রতে হয়।