
শুক্রবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » আইন- আদালত | জাতীয় সংবাদ | ঢাকা | বক্স্ নিউজ | শিরোনাম » ‘হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে দুদক ব্যস্ত শিক্ষকদের নিয়ে’ কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা বৈধ
‘হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে দুদক ব্যস্ত শিক্ষকদের নিয়ে’ কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা বৈধ
Bijoynews : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা ২০১২ বৈধ বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে কোনো শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবেন না। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে দৈনিক বা প্রতিদিন অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন । নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে কোচিংয়ে উৎসাহিত বা উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করতে পারবেন না।
নীতিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা পৃথক পাঁচটি রিটের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান বলেছেন, এ রায়ের ফলে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ থাকবে। কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের নিয়ে দুদকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই নোটিশ দেয়া হয়।
পরে ওই নোটিশ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন শিক্ষকরা। রিটের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি ওই নোটিশের কার্যকারিতা চার মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি রুল জারি করেন।
পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করে। ওই আপিল নিষ্পত্তি করে একই বছরের ৩১শে জুলাইয়ের রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের এই বেঞ্চকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
রুলের ওপর শুনানিতে হাইকোর্ট সাবেক দুই অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামালকে এ্যামিকাস কিউরি (আইনগত ব্যাখ্যার বন্ধু) হিসেবে নিয়োগ দেন। গত ২৭শে জানুয়ারি রুলের ওপর শুনানি শেষ হলে রায়ের জন্য ৭ই ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
দুদক ব্যস্ত শিক্ষকদের নিয়ে
রায়ের আগে শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যক্রমে ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন, ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে আর তারা শিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বড় বড় রাঘববোয়ালদের ছেড়ে দিয়ে স্কুল শিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক। যেখানে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলে যাচ্ছেন কি যাচ্ছেন না তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা।
দুদক দুর্নীতিবাজ রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না উল্লেখ করে আদালত বলেন, ছোট দুর্নীতির আগে বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। তবেই দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব হবে।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালায় যা রয়েছে
২০১২ সালের ২০শে জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা ২০১২ জারি করেন। নীতিমালায় মোট ১৪টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। অনুচ্ছেদ-৩ এ উল্লেখ আছে- কোনো শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবেন না। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে দৈনিক বা প্রতিদিন অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে লিখিতভাবে উক্ত ছাত্রছাত্রীদের তালিকা (রোল-শ্রেণি উল্লেখসহ) দিতে হবে।
অনুচ্ছেদ-৫ এ আছে কোনো শিক্ষক কোনো শিক্ষার্থীকে কোচিংয়ে উৎসাহিত বা উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করতে পারবেন না। ৭ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি কোচিং বাণিজ্য রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনীয় প্রচারণা এবং অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। ১২ অনুচ্ছেদের (ক) উপ-অনুচ্ছেদে মেট্রোপলিটন/বিভাগীয় এলাকার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে (সার্বিক) সভাপতি এবং মাউশির উপ-পরিচালককে (সংশ্লিষ্ট অঞ্চল) সদস্য সচিব করে ৯ (নয়) সদস্যবিশিষ্ট মনিটরিং কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে।
একই অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সার্বিক/শিক্ষা ও উন্নয়ন) সভাপতি এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে (সংশ্লিষ্ট) সদস্য সচিব করে ৮ (আট) সদস্য বিশিষ্ট জেলা মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। আবার একই অনুচ্ছেদের (গ) উপ-অনুচ্ছেদে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সভাপতি এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে প্রণীত নীতিমালার প্রয়োগ ও এ ধরনের কাজকে নিরুৎসাহিত করার জন্য সরকার সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
অনুচ্ছেদ ১৪ এর ক উপ-অনুচ্ছেদে আইন অমান্যকারীদের শাস্তি উল্লেখ আছে। এখানে বলা আছে এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার এমপিও স্থগিত, বাতিল, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত, চূড়ান্ত বরখাস্ত ইত্যাদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই অনুচ্ছেদের খ উপ-অনুচ্ছেদে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের এমপিওবিহীন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তার প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বেতন ভাতাদি স্থগিতসহ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একই ধরনের শাস্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে। ১৪ অনুচ্ছেদের ঙ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ প্রয়োগ করা হবে।