
মঙ্গলবার, ২২ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » অনিয়ম-দুর্নীতি | শিরোনাম » কেশবপুরে ডিলার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি প্রকল্প কমিটি
কেশবপুরে ডিলার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি প্রকল্প কমিটি
বিজয় নিউজ: জি.এম.মিন্টু,কেশবপুর(যশোর) :
কেশবপুরে কাবিখা ও টিআর প্রকল্পে খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত চাল নিন্মমানের ঘোষণা দিয়ে ডিলাররা সিন্ডিকেট করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের অর্ধেক দামেও ক্রয় করছে না। ফলে এ উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে ৩৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার দাবি এ চালের গুণগত মান খুবই ভালো এবং মানুষের খাওয়ার উপযোগী। ডিলাররা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে ৩৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় (কাবিখা) বিশেষ কোটায় ৩০০ ও সাধারণ কোটায় ১৪৮ দশমিক ৮৬৭ মেট্রিক টন ও টিআর প্রকল্পে বিশেষ কোটায় ৩০০ মেট্রিক টন ও সাধারণ কোটায় ১৩৩ দশমিক ১৫৫৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ত্রিমোহিনী ইউনিয়ন ৪টি, সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের ৩টি, মজিদপুর ইউনিয়নের ৩টি, বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের ৪টি, মঙ্গলকোট ইউনিয়নের ৩টি, কেশবপুর সদর ইউনিয়নের ৩টি, পাঁজিয়া ইউনিয়নের ৩টি, সুফলাকাটি ইউনিয়নের ৩টি ও গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাবিখা ৪৪৮ দশমিক ৮৬৭ মেট্রিক টন এবং মসজিদ, মন্দির, ক্লাব সংস্কার, সোলার স্থাপনে এ চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্প কমিটি গঠন করে ইতোমধ্যে ৫০ ভাগ চাল উত্তোলন করা হয়ে গেছে। সরকার গত সংগ্রহ অভিযানে মিলারদের কাছ প্রতি কেজি চাল ৩১ টাকা দরে ক্রয় করে খাদ্য গুদামে মজুদ করেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার প্রতি মেট্রিক টন চালের বাজার মূল্য ৩৬ হাজার ৩৩৫ দশমিক ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। সেই হিসেবে এ উপজেলায় বরাদ্দকৃত ৮৮২ মেট্রিক টন চালের দাম ৩ কোটি ২০ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৩ টাকা।
একাধিক প্রকল্প সভাপতি জানান, কেশবপুরের কালো বাজারের ডিলাররা এ চাল খাওয়ার অনুপযোগী, গো-খাদ্য, মাছের খাদ্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে সিন্ডিকেট করে প্রতি মেট্রিক টন চাল সাড়ে ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায় ক্রয় করছেন। এ হিসেবে ৮৮২ মেট্রিক টন চালের বর্তমান বাজার মূল্য ১ কোটি ২৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ফলে বর্তমান বাজার মূল্যে প্রকল্প কমিটিকে কাজ বাস্তবায়ন করতে হলে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা গচ্চা দিতে হবে। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্যেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তয়ন কর্মকর্তা ওয়ার্ক ওর্ডার দিয়েছেন। ফলে প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে প্রকল্প কমিটিকে। ডিলারদের সিন্ডিকেটের কারণে চালের বাজার মূল্য না থাকায় প্রকল্পের কাজ অর্ধেকও বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এরপরও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সরকারের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ রেখেই এসব অসাধু ডিলারদের অর্থেই এ কাজ বাস্তবায়ন করছেন।কেশবপুর বাজারের ডিলার আমিন উদ্দীন দফাদার, অহেদুজ্জামান, শম্ভু ঠাকুর, বিষ্ণুপদ বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহকৃত চালের মান নিন্মমানের হওয়ায় তা গো-খাদ্য, মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বাইরের ডিলাররা এ চাল কিনতে চাচ্ছে না। যার কারণে সরকার নির্ধারিত মূল্যের অর্ধেকেরও কম দরে এ চাল কিনতে হচ্ছে। তবে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা প্রবোধ কুমার পাল ডিলারদের এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার গুদাম থেকে সরবরাহকৃত চালের গুণগত মান খুবই ভালো এবং খাওয়ার উপযোগী। ভারতীয় এলসির চাল আমদানির কারণে চালের বাজার কিছুটা মন্দা যাচ্ছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খাদ্য গুদাম থেকে টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে ৩০০ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিপুল কুমার মালাকার বলেন, চালের বাজার মন্দা যাওয়ার কারণে কাজের গতি কিছুটা স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে প্রকল্পের কাজ যাতে বাস্তবায়ন হয় সে জন্য কাজ করে যাচ্ছি।