
সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অনিয়ম-দুর্নীতি | ক্রাইম রির্পোট | জাতীয় সংবাদ | বক্স্ নিউজ | শিরোনাম | স্বাস্থ্য সংবাদ » কুষ্টিয়া ২৫০ বেড হাসপাতাল এখন দুর্ণীতির স্বর্গরাজ্য : ৮ : রোগীদের নিম্নমানের খাবার খেতে বাধ্য করছে আরএমও
কুষ্টিয়া ২৫০ বেড হাসপাতাল এখন দুর্ণীতির স্বর্গরাজ্য : ৮ : রোগীদের নিম্নমানের খাবার খেতে বাধ্য করছে আরএমও
॥ শামসুল আলম স্বপন ॥
কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের খাদ্য সরবরাহে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগী প্রতি মাথা পিছু ১২৫ টাকার খাবার দেয়ার কথা থাকলেও রোগীরা তা পাচ্ছে না। রোগীদের নিম্ন মানের খাবার খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। পরিমানেও কম যা একজন রোগীর জন্য যথেষ্ট নয়। রান্নায় শুধুমাত্র আম কাঠের খড়ি দেয়ার কথা থাকলেও খড়ি সরবরাহ করা হচ্ছে ভেটুল কাঠসহ নিম্নমানের বিভিন্ন গাছের ছাল/বাকলের খড়ি। ২০১৬/২০১৭ইং অর্থ বছরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের পথ্য সরবরাহের জন্য গৃহিত দরপত্র অনুযায়ী দেখা যায় মাথা পিছু ১২৫ টাকা হারে দৈনিক একজন রোগীর খাবার সকালে ১শ’ গ্রাম ওজনের ১টি পাউরুটি যার মূল্যে ১৬টাকা ৫০ পয়সা, মুরগীর ডিম ১টি ১২ টাকা, সবরী অথবা সাগর কলা ১টি (৫ ইঞ্চি সাইজ ও ৭ ইঞ্চি সাইজ) ৮ টাকা। মোট ৩৬ টাকা ৫০ পয়সার খাবার দেয়ার কথা অথবা চিড়া ১১২ গ্রাম ৯ টাকা ৫০ পয়সা, চিনি ১০০ গ্রাম ৭ টাকা, সবরী অথবা সাগর কলা ১টি(৫ ইঞ্চি সাইজ ও ৭ ইঞ্চি সাইজ) ৮ টাকা, মুরগী ডিম ১টি ১২ টাকা। মোট ৩৬ টাকা ৫০ পয়সার খাবার দেয়ার কথা । অথচ এক্ষেত্রে সকালে রোগীরা ফার্মের ছোট আকৃতির ডিম দেয়া হয় যার মূল্য ৭ টাকা ৫০ পয়সা, সাগরকলা ৮ টাকার পরিবর্তে দেয়া হয় ৩ থেকে ৪ টাকা দামের কলা, ১৬ টাকা ৫০ পয়সার ১’শ গ্রাম ওজনের পাউরুটির বদলে দেয়া হয় ৫ টাকা দামের নিম্নমানের পাউরুটি যার ওজন ৭০ গ্রাম। রোগীরা ৩৬ টাকা ৫০ পয়সার খাদ্যের বদলে পাচ্ছে মাত্র ২৪ টাকার খাবার। দুপুরে ও রাতের খাবারে দেয়ার কথা চাউল বিআর-৫০-২শ’ ৮০গ্রাম, ১২ টাকা ৬০ পয়সা অথবা চাউল বিআর-২৮-২শ’ ৮০ গ্রাম, ১২ টাকা ৬০ পয়সা। ডাল মুশুরী দেশী ১০ গ্রাম ১ টাকা ৫৫ পয়সা, সোয়াবিন ১০ গ্রাম ১ টাকা ৪০ পয়সা, লবন ১০ গ্রাম ৪০ পয়সা, পেঁয়াজ দেশী ১০ গ্রাম ৬০ পয়সা, রসুন ১ গ্রাম ১৫ পয়সা, আদা ১ গ্রাম, ১৭ পয়সা, হলুদ ২ গ্রাম, ৬০ পয়সা, মরিচ গুড়া ২ গ্রাম ৭২ পয়সা, জিরা ১ গ্রাম, ৬৫ পয়সা, মসলা .৫০ গ্রাম ৭১ পয়সা, আলু ২০ গ্রাম ৭০ পয়সা, কুমড়া ১’শ ৪ গ্রাম ৩ টাকা ৬৫ পয়সা, পেঁপে ১’শ৪ গ্রাম ৩ টাকা ৬৫ পয়সা,পটল ৯১ গ্রাম ৩ টাকা ৬৫ পয়সা, ফুলকপি ৭৩ গ্রাম ৩ টাকা ৬৫ পয়সা, বাঁধাকপি ১’শ ৪ গ্রাম ৩ টাকা ৬৫ পয়সা, কাঁচ কলা ৯১ গ্রাম ৩ টাকা ৬৫ পয়সা, লাউ ১’শ৪ গ্রাম ৩ টাকা ৬৫ পয়সা, পুঁইশাক ১’শ ২১ গ্রাম ৩ টাকা ৬৫ পয়সা, টমেটো ৯১ গ্রাম ৩ টাকা ৬৫ পয়সা, পালংশাক ৯১ গ্রাম ৩ টাকা ৬৫ পয়সা, মাংস খাশী (৮ কেজি ওজনের হতে হবে অতিরিক্ত চর্বী ও কিডনী বাদে যা হাসপাতালে এনে জবাই করতে হবে) রোগী পাবে ৭৪ গ্রাম ৫২ টাকা, মাংস ছাগী ৮৭ গ্রাম ৫২ টাকা, মাংস মুরগী দেশী (মাথা, কলিজা ও নারী ভূড়ি বাদে ২’শ ৫০ গ্রাম ওজনের কম নহে) ৮০ গ্রাম ৫২ টাকা, মাংস মুরগী ফার্ম (মাথা, কলিজা ও নারী ভূড়ি বাদে ২’শ ৫০ গ্রাম ওজনের কম নহে) ১০৮ গ্রাম ৫২ টাকা, মাছ রুই ১ কেজি ওজনের ১’শ ৩০ গ্রাম, ৫২ টাকা অথবা ৭৫০ গ্রাম ওজনের ১৪৮ গ্রাম ৫২ টাকা, মৃগেল ১ কেজি ওজনের ১’শ ৩০ গ্রাম ৫২ টাকা অথবা ৭৫০ গ্রাম ওজনের ১৪৮ গ্রাম ৫২ টাকা, পাঙ্গাস ১ কেজি ওজনের ২’শ ৮০ গ্রাম ৫২ টাকা, কাতলা ১ কেজি ওজনের ৮৭ গ্রাম ৫২ টাকা, ইলিশ ১ কেজি ওজনের ৪৩ গ্রাম ৫২ টাকা, গ্রাস কাপ ১ কেজি ওজনের ১৪৮ গ্রাম ৫২ টাকা, তেলাপিয়া ৫’শ গ্রাম ওজনের ১’শ ৭৩ গ্রাম ৫২ টাকা ও রান্নার খড়ি আম কাঠ ৯’শ গ্রাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা পাওয়ার কথা। অথচ রাতে ও দুপুরের খাবারে রোগীরা শুধু মাত্র পাঙ্গাশ, ধাড়ীর মাংশ, আলু, পেঁপে, মিষ্টি কুমড়া ও ডাউল পেয়ে থাকে। মুরগীর মাংশ, খাশীর মাংশ, ইলিশ মাছ, রুই মাছ, কাতলা মাছ, মৃগেল মাছসহ অন্যান্য সবজি তারা চোঁখে দেখছে না। অথচ দরপত্র অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহের প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন খাবার পরিবেশন করার নিয়ম রয়েছে। যেমন, কোনদিন মুরগীর মাংশ,কোনদিন খাশির মাংশ, কোনদিন রুই মাছ, কোনদিন ছাগির মাংশ, কোনদিন মৃগেল মাছ, কাতলা মাছ, পাঙ্গাশ মাছ ইত্যাদি। কিন্তু আরএমও’র কল্যাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ নিয়মের তোয়াক্কা করে না। শুধু মাত্র ৫’শ গ্রাম ওজনের পাঙ্গাশ মাছ ও সপ্তাহে কোন কোন দিন ধাড়ী ছাগলের মাংশ পরিবেশন করে আসছে। চাউল বিআর-৫০ ও ২৮ এর পরিবর্তে পাচ্ছে নি¤œ মানের চাউল এবং ২’শ ৮০ গ্রামের বদলে পাচ্ছে মাত্র ১’শ গ্রাম থেকে ১শ’৫০ গ্রাম। মাংসের টুকরো এতো ছোট যা ১ প্লেট খাবারের উপর রাখা হলে চোঁখে পড়ে না। এখানে ৫২ টাকার পরিবর্তে রোগীরা মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মাংশ পেয়ে থাকে। মাছের ক্ষেত্রে একই রকম ৫২ টাকার পরিবর্তে রোগীরা মাত্র ২৫ থেকে ৩৫ টাকার মাছ পেয়ে থাকে। মাছের ওজনের ক্ষেত্রে রুই ১ কেজি ও ৭শ’ ৫০ গ্রাম, মৃগেল ১ কেজি ও ৭৫০ গ্রাম, পাঙ্গাস ১ কেজি, কাতলা ১ কেজি ওজনের দেয়ার কথা থাকলেও রোগীদের ছোট ছোট পাঙ্গাশ, সিলবার কার্প, গ্রাস কাপ মাছ দেয়া হয়। যার ওজন সর্বচ্চ ৫’শ গ্রাম থেকে ৭’শ গ্রাম। রাতে এবং দুপুরে ৮৮ টাকা ৫০ পয়সার খাবার দেয়ার কথা থাকলেও রোগীরা পাচ্ছে মাত্র ৬৫ থেকে ৭০ টাকার খাবার। প্রতি রোগীকে মাথা পিছু ১২৫ টাকার পরিবর্তে মাত্র ৯০ টাকার খাবার দেয়া হচ্ছে। এতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় সারে ৮ হাজার টাকা এবং মাসে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ। ছাগল হাসপাতালে এনে জবাই করার কথা থাকলেও তা কখনই করা হয়না। রোগাকান্ত ছাগল, ধাড়ী ছাগল, খাওয়ানো হচ্ছে রোগীদের কেউ তা জানেনা। এ ব্যাপারে হাসপাতালের রোগীদের সাথে কথা হলে তারা ব্যাপক অভিযোগ করেছে। হাসপাতালের ২নং ওয়ার্ডের রোগী পলাশ শাহা (৬৫), একই ওয়ার্ডের রোগী ফরজ (৫৭), আবুল কালাম আজাদ (৭০), ফজলুল হক (৫০), বাকিবিল্লা, ৩নং ওয়ার্ডের রোগী শাহেলা (৪০), একই ওয়ার্ডের রোগী জয়গুল নেছা (৮০) ও শেফালি (৩০) অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের খাবার অতিনিম্ন মানের। পাউরুটি গন্ধ খাওয়া যায়না। ইলিশ, রুই, খাশির মাংশ ও দেশি মুরগীর মাংশ তারা চোখে দেখে না মাসের পর মাস। রোগীদের মাথা পিছু ১২৫ টাকার খাবার দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হচ্ছে না। যে খাবার দেয়া হয় তাতে একজন রোগীর জন্য কিছুই হয়না। এছাড়াও খাবার নিম্ন মানের। যা অনেক সময় খাওয়া যায়না, ফেলে দিতে হয়।
অপর এক সূত্র জানালেন, হাসপাতালের খাবার ও পথ্য সরবরাহের টেন্ডার প্রত্যেক বার একজনায় পেয়ে থাকেন। ঠিকাদারী সিন্ডিকেট ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে আরএমও’র সহযোগিতায় তারা টেন্ডার পেয়ে থাকেন। ইচ্ছা অনুযায়ী পণ্যের অতিরিক্ত দর দিয়ে টেন্ডার পেয়ে তারা সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের রোগী ও সচেতন মহল সরেজমিনে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে।