
সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অনিয়ম-দুর্নীতি | কুষ্টিয়ার সংবাদ | জাতীয় সংবাদ | বক্স্ নিউজ | শিরোনাম » সরকারি চাকরি করেন বলে বেতন পান আর কাজ করেন বলে ঘুষ নেবেন তা হবে না : দুদক কমিশনার
সরকারি চাকরি করেন বলে বেতন পান আর কাজ করেন বলে ঘুষ নেবেন তা হবে না : দুদক কমিশনার
বিশেষ প্রতিনিধি : দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার এ,এফ,এম আমিনুল ইসলাম বলেছেন,“ সরকারি চাকরি করেন বলে বেতন পান আর কাজ করবেন বলে ঘুষ নেবেন তা হবে না । সকলকে সততার সাথে কাজ করতে হবে। জনগণকে দিতে হবে সর্বোচ্চ সেবা। কোন গাফেলতি বরদাস্ত করা হবে না। যার চাকরি করার ইচ্ছে নেই তিনি চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে যাবেন । দুর্নীতি করলে দুদকই বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করবে । গতকাল ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সরকারি কর্মকর্তা,জনপ্রতিনিধি সাংবাদিক ও সূধীজনের সাথে মত বিনিময় কালে তিনি এ কথাগুলো বলেন। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় দুদক কমিশনার কুষ্টিয়া ২৫০ বেড হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে বলেন,কোন অনিয়ম অব্যবস্থা দুর্নীতি ক্ষমা করা হবে না। তিনি সিভিল সার্জনকে নিদের্শ দেন যে চিকিৎসক ডিউটিতে গাফেলতি করবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দুদককে জানাতে হবে। তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন দুর্নীতির সংবাদ লিখে দুদকের কাছে প্রেরণ করুন দুদক ব্যবস্থা নিবে।
জেলা প্রশাসক :
কুষ্টিয়ার বিদায়ী জেলা প্রশাসক তার সুচনা বক্তব্যে
তার সময়ে কুষ্টিয়ার ভুমি ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমি চেষ্টা করেছি সকল দপ্তরে বিশেষ করে পাসপোর্ট,সাবরেষ্ট্্ির অফিস,হাসপাতালের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য অনেকটা সফল হয়েছি কিন্তু বালু মহালের দুর্নীতি বন্ধ করতে পারেনি । বালু খেকো কুষ্টিয়ার মাসুম ও ভেড়ামারার সাঈদ খান লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে খেয়েযাচ্ছে। তিনি বালু খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুদক কমিশনারকে অনুরোধ জানান।
পুলিশ সুপার :
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম বলেন, পুলিশের রয়েছে প্রায় ৫ হাজার আইন । সকল আইন যদি পুলিশ প্রয়োগ করে তা হলে জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়ে যাবে । জনগণের সেবা দেয়ায় আমাদের কাজ । পুলিশের বিরুদ্ধে অনেকেই কথা বলবে কিন্তু আমার ওস্তাদ বলেছেন মাথা গরম করা যাবে না । ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। দোষে গুনে মানুষ । পুলিশের শুধু দোষ ধরলে চলবে না তাদের সমস্যাও দেখতে হবে। তিনি বলেন সত্য হোক মিথ্যা হোক ১৫৬ ধারায় বলা আছে কেউ মামলা দিলে মামলা নিতে হবে আমাদের কিছু করার নেই ।
আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান :
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান বলেন, আজকেই অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দুর্নীতির দায়ে একজন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও একজন জনপ্রতিনিধি গ্রেফতার হয়েছে । একদিন আমাদের এই দেশ ছিল দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন । কিন্তু জাতির জনকের কন্যার জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে যাচ্ছে । তাই আমাদের সকলকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
হাজী রবিউল ইসলাম :
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও কুষ্টিয়া চেম্বারের সভাপতি বীরমুক্তযোদ্ধা হাজী রবিউল ইসলাম বলেন, জাতির জনকের স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়তে হলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে হবে। দুদক যে উদ্যোগ নিয়েছে তার প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে বললেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দেশকে বাসযোগ্য করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি কারো বিরুদ্ধে মিথ্যে রিপোর্ট না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন,আসুন সবাই মিলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে এগিয়ে আসি।
শেখ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিন্টু :
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের অন্যতম সহ-সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধো বিশিষ্ট সংগঠক, এককালের তুখোড় ছাত্রনেতা, লেখক ও কলামিষ্ট শেখ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিন্টু সনাক সভাপতি রফিকুল ইসলাম টুকুর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ১ বছর আগেও এই হাসপাতালের চিকিৎসার সুনামের বাতাস বয়ে যেত কিন্তু কুষ্টিয়া ২৫০ বেড হাসপাতাল এখন দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য । স্থানীয় একটি পত্রিকা ও অনলাইনে ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে । যা শত ভাগ সত্য। অথচ টুকু সাহেবের বক্তব্য হলো “শ্যাম রাখি না কুল রাখি” অবস্থার মত । তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে হাসপাতাল থেকে কি সুবিধা পান আমরা জানিনা । কিন্তু কুষ্টিয়াবাসী হাসাপাতালে কোন চিকিৎসা পায় না। তিনি বলেন, ডাক্তার হাসপাতালে আসার কথা সকাল ৮টায় উনারা আসেন ১০টায়। ছুটির হওয়ার কথা ২টা৩০মিনিটে উনারা যান ১টায় । আউটডোরে রোগীর বিশাল লাইন পড়ে যায় । “ফ্রি-স্যাম্পুলরা” টাকা নিয়ে যে সব রোগী ১টার আগে ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকান তাদের দেখে প্রেসক্রিপশনে কয়েকটি টেষ্ট দিয়ে ছেড়ে দেন। ডাক্তাররা রীতিমত গরীব মানুষের চিকিৎসা সেবার পরিবর্তে চিকিৎসা বাণিজ্য করে যাচ্ছেন তোষামদকারীদের তা চোখে পড়ে না। তিনি বলেন, হাসপাতালের অনিয়ম অব্যবস্থা নাকি প্রধানমন্ত্রীও ঠিক করতে পারবে না এমন কথা বলেছেন হাসপাতালের ডাক্তারদের আবাসিক ডাক্তার রাজা ( সিভিল সার্জন নন)। জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই ঐদ্ধত্য ও ধৃষ্টাতাপূর্ণ বক্তব্যের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রী নন জনগণই ব্যবস্থা নিবে হাসপাতালের অনিয়মের বিরুদ্ধে । বক্তব্য শেষে তিনি দৈনিক দেশতথ্য প্রকাশিত নিউজের কাটিং দুদক কমিশনারের হাতে তুলে দেন। কথার যাদুকর শেখ গিয়াস উদ্দিন আহমেদ মিন্টুর বক্তব্যের সময় যেমন পিন পতন নিরবতা ছিল তেমন বক্তব্য শেষে সকলে করতালি দিয়ে তার বক্তব্যকে সমর্থন জানান ।
আলহাজ্ব আজগর আলী :
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আজগর আলী বলেন,কুষ্টিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থার ধ্বস নেমেছে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে নয় পুলিশ বিভাগে দুর্নীতিও কম নয়। একজন ওসি যখন ৫৪ ধারা নিয়ে বাণিজ্য করে টাকার পাহাড় গড়ে তোলে তখন তারই কলিকের বউ স্বামীকে ধিক্কার জানাই । বাধ্য হয়ে সেও ঘুষ খায় । তাই আমাদের সকলকে ঘুষের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন বার বার বলেও কুষ্টিয়াকে মাদক মুক্ত করা যায়নি। মাদক দ্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা হয়তো মাদকের নেশায় বেভোর তাই নেশা মুক্ত হচ্ছে না আমাদের সমাজ। তিনি বলেন আমরা যারা শিক্ষিত বলে দাবি করি তারাই মুলত দুর্নীতির সাথে জড়িত। কোন কৃষক দুর্নীতি করে না।
কুষ্টিয়া আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান নেতা পৌরমেয়র উপস্থিত থাকলেও তিনি কোন বক্তব্য রাখেননি । কুষ্টিয়া চিকিৎসাসহ বিভিন্ন দপ্তরের অব্যবস্থা- অনিয়ম তুলে ধরে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া বারের সাধারণ সম্পদক এ্যাডভোকেট জহুরুল ইসলাম,জিপি এ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান মাসুম, সাংবাদিক শামসুল আলম স্বপন, নূর আলম দুলাল প্রমুখ।