
শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ জগত | খুলনা | জাতীয় সংবাদ | বক্স্ নিউজ | রংপুর | রাজনীতি | শিরোনাম » চিলাহাটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বেহাল দশা দেখার কেউ নেই !!!
চিলাহাটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের বেহাল দশা দেখার কেউ নেই !!!
রুহানা ইসলাম ইভা.
ডোমার উপজেলা প্রতিনিধিঃ দেশের শহরাঞ্চলগুলোতে অনেক বড় বড় নামকরা সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। এবং সেখানে অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ডাক্তারের কোন অভাব নেই বললেই চলে। কিন্তু, গ্রামাঞ্চলে তেমন কোন ভাল হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই। তবে প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। কিন্তু, এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। সেখানে না আছে প্রয়োজন মাফিক ঔষধ, আর না আছে কোন অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ডাক্তার।
নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। যেগুলোতে মোটামুটি ভাল চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। ডোমার উপজেলা ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ডোমার উপজেলায় মোট উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৫টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কন্দ্রে ১০টি ও কমিউনিটি কিøনিক ২৮টি। উক্ত উপজেলায় ৫টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, ভোগডাবুরী, জোড়াবাড়ী, গোমনাতী, পাঙ্গামটুকপুর ও ডোমার ইউনিয়নে। অথচ কাগজে-কলমে ৮টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখানো হয়ে থাকে। এই ৫টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে ৪টি কেন্দ্র রয়েছে এবং ভোগডাবুরী ইউনিয়নের চিলাহাটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্থানে মা ও শিশু হাসপাতালের বিল্ডিং নির্মান করায় সেই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার নি¤œআয়ের মানুষগুলো প্রায় ২/৩ বছর যাবত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
প্রতিটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে ২ দিন করে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তাররা বসে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসেন। বর্তমানে বেশিরভাগ ডাক্তারেই ট্রান্সফার হয়ে চলে গেছে এবং ভোগডাবুরী ইউনিয়ন সহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কোন ডাক্তার নেই। ভোগডাবুরী ইউনিয়নের চিলাহাটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি বন্ধ আছে। যার ফলে উক্ত ইউনিয়ন সহ পাশ্ববর্তী কেতকীবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ৪০/৪৫ হাজার মানুষ এখন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। মা ও শিশুদের জন্যে প্রতিটি ইউনিয়নে ১ টি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও প্রতিটি ইউনিয়নে ৩টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক নেই।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, সরকারকর্তৃক বরাদ্ধকৃত উপজেলা পর্যায়ে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকবে ১০টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০টি ও কমিউনিটি ক্লিনিক ৩০টি। কিন্তু, ডোমার উপজেলায় সেটি নেই। উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৫টি থাকলেও কাগজে-কলমে দেখানো হয় ৮টি। এবং প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও, সেখানে না আছে ঔষধ আর না আছে ডাক্তার। প্রতিটি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একটি ১ জন এসএসসিএমও, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ১ জন এফডাবলুভি, ১ জন আয়া ও ১ জন পিয়ন থাকবে। কিন্তু, ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ১টি ইউনিয়নেরও এই পদে কোন লোক নেই।
ভোগডাবুরী ইউনিয়নের পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এফডাবলুভি পদে একজন নিয়োজিত আছেন, যিনি প্রতি সপ্তাহে ২ দিন এসে রোগীদের দেখে প্রয়োজন অনুসারে ঔষধ সরবারহ করে চলে যান। চিলাহাটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। এই কেন্দ্রে যে যে পদে লোক প্রয়োজন, সেই সকল পদ রয়েছে। কিন্তু, এই পদগুলো সব ফাঁকা পরে আছে। এমনকি এখানে কোন মহিলা ডাক্তারও নেই। ভোগডাবুরী ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ব্যবস্থাপক কমিটির সকল সদস্যরা মিলে ৩ বছর পূর্বে মজিয়া খাতুন নামে একজন বেসরকারী মহিলা সেবিকাকে নিয়ে এসে এখানে রাখেন এবং কমিটির লোকরাই তার মাসিক ভাতা প্রদান করেন। বর্তমানে সেই কমিটির বিলুপ্তি হওয়ায় তিনি প্রায় ২ বছর ধরে কোন মাসিক ভাতা পাচ্ছেন না। যে সকল প্রসূতি মা এখানে সুস্থ ও চিকিৎসা সেবার জন্য আসেন, তারা খুশি মনে করে যা প্রদান করেন সেটা দিয়েই তাকে চলতে হয়। কিন্তু, এতো বছর ধরে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে আসছেন, তবুও তাকে সরকারীভাবে তাকে কোন সুবিধা দেওয়া হয়না।
এ ব্যপারে ভোগডাবুরী ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের পরিদর্শক এ.কে.এম.শাহাদাৎ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,“এই ভোগডাবুরী ইউনিয়নের শত শত সমাজ সেবক বসবাস করছে। অথচ এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জনবল নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই। সে মহিলাটি বেসরকারীভাবে এখানে সেবা দিয়ে আসছেন, সে যদি চলে যায় তাহলে এই কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সেবা বলতে কিছুই থাকবে না। প্রতিটি ইউনিয়নের বাজেটে স্বাস্থ্য সেবার একটি অংশ থাকে। সেই অংশ থেকে একটু সহানুভুতি দেখালেই এখানে ২ জন স্বাস্থ্য সেবিকা রাখা যায়। ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও কোন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়না। আমার নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্য সেবার মানকে ধরে রাখার জন্য এই সেবিকাকে এই কেন্দ্রে রেখেছি। আমি নিজেও এই করোনাকালীন সময় প্রতিটি পাড়া/মহল্লায় গিয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার পক্ষে যতটুকু ঔষধ প্রদান করার কথা তাও সাধারণ মানুষদের মাঝে দিয়ে আসছি। যাতে যেকোন অসুস্থ্য মা ও শিশু এখানে এসে ফিরে না যায়। আমাদের কেন্দ্রে প্রয়োজন অনুসারে ঔষধও নেই। এমনও হয় মাঝে মাঝে কিছু অসুস্থ্য রোগী এসে ফিরে যায় ঔষধ না পেয়ে। প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থাকে। যাতে প্রতিটি ইউনিয়নের মা ও শিশুরা সঠিক সেবা পেয়ে থাকে। কিন্তু, আমাদের ডোমার উপজেলার কোন ইউনিয়নেই সেই স্বাস্থ্য সেবা কোন মা পেয়ে থাকেন না। যার ফলে প্রতিটি ইউনিয়নের মা ও শিশুকে অনেক জটিল রোগে ভুগতে হয়”।
বর্তমানে ডোমার উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে যে কয়েকটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ও কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে, এই কেন্দ্রগুলোতে যে যে পদ আছে সেগুলোতে লোক নিয়োগ করে এবং উক্ত কেন্দ্রে সঠিক ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে হবে। আর নিজ দায়িত্বে কাজ না করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন নেওয়া হবে, এই রকম কিছু নিয়ম যদি করা হয়, তাহলে হয়ত ডোমার উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের মা ও শিশুরা সুরক্ষিত থাকবে। গ্রামাঞ্চলে কোন ডাক্তারেই থাকতে চায় না। কারন, শহরাঞ্চলের মতো এখানে তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। কিন্তু, নিজের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা না করে, এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের অসহায় মানুষদের কথা চিন্তা করে যদি এখানে ডাক্তাররা আসে, তাহলে এই এলাকার মানুষরা অনেকটা সচ্ছল জীবনযাপন করবে। তা না হলে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে চলছে, এই স্বাস্থ্য সেবার মান দেখে মনে এক সময় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন সেটা বাদ দিয়ে, বিনা চিকিৎসা,ডাক্তার ও ঔষধের কারনে অনেক অসহায় মানুষদের কষ্টে দিন কাঁটাতে হবে।