
সোমবার, ৯ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ জগত | জাতীয় সংবাদ | ঢাকা | বক্স্ নিউজ | রাজনীতি | শিরোনাম » কোটিপতি কর্মচারী আতিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
কোটিপতি কর্মচারী আতিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
Bijoynews:
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান খান। তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হলেও তার দাপটে তটস্থ থাকতেন শিক্ষকরা। অভিযোগ আছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে দুর্নীতির মাধ্যমে আয় করেছেন অঢেল টাকা। পদ না থাকলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ তৈরি করে নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। এর পর কলেজটির নিয়ন্ত্রণ নেন আতিক। তবে অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আতিকের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্ত শুরুর পর দুদকের আবেদনে আতিকুর রহমানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত।
গতকাল রবিবার ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. ডক্টর শাহান আরা বেগম, দুজন শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সাবেক একজন সদস্যের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
এর আগে আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্যান্য ব্যক্তির যোগসাজশে শিক্ষার্থী ভর্তির বিনিময়ে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে মর্মে আদালতে আবেদন করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম। অনুসন্ধানী এ কর্মকর্তা তার আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, আতিকুর রহমানের নামে সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৬টি, প্রাইম ব্যাংকে ২৯টি, ঢাকা ব্যাংকে ১০টি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ১০টি, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকে ৩টিসহ মোট ১৫টি ব্যাংকে ৯৭টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে গত ছয় বছরে ১১০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
এ ছাড়া বনশ্রীর মসজিদ মার্কেটের সঙ্গে বিশ্বাস লাইব্রেরি নামে তার বিশাল বইয়ের দোকান আছে, আফতাবনগর বি ব্লকের ৩৪নং প্লটটিতে বিশ্বাসবাজার নামে তার সুপারশপ রয়েছে, ভিশন-৭১ নামে তার আছে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আফতাবনগর ও বনশ্রীতে আতিকুরের বাড়ি রয়েছে ৫টি। যা তার জ্ঞাত আয়ের উৎসবহির্ভূত সম্পদ এবং দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারায় ও মানিলন্ডারিং প্রতিরােধ আইন, ২০১২ ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই অভিযুক্ত ব্যক্তি বিদেশে পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা গেছে, আতিকুর রহমান ২০০৪ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উপসহকারী প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। ২০১৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। অথচ এমপিওভুক্ত উচ্চমাধ্যমিক কলেজে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কোনো পদ নেই। অবৈধভাবে এ পদ সৃষ্টি করে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে অবৈধ ভর্তিসহ সব বাণিজ্যের হোতা ছিলেন এ আতিক।
প্রতিষ্ঠানের তিনটি ক্যাম্পাসের প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর ইউনিফর্ম, ক্যান্টিন, লাইব্রেরি সবই ছিল বেনামে তার নিয়ন্ত্রণে। এমনকি স্কুলের সামনে ফুটপাতে শতাধিক দোকান বসিয়েও তিনি আয় করেন মোটা অঙ্কের টাকা। আবার প্রতিষ্ঠানে যত ধরনের কেনাকাটা, উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ হয় তার সবই করেন আতিক। দরপত্রেও অংশ নেয় নামে-বেনামে তারই প্রতিষ্ঠান। সেখানে চলে বড় ধরনের লুটপাট। গত ১২ বছরে প্রতিষ্ঠানে পাঁচশতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, বেশিরভাগ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং কর্মচারী নিয়োগে দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। যার বেশিরভাগই হয়েছে আতিকের মাধ্যমে।
এর আগে শিশু পরীক্ষার্থীর খাতার ভুল উত্তর রাবার দিয়ে মুছে শুদ্ধ উত্তর লিখে নম্বর বাড়িয়ে নিজেদের পছন্দ মতো ১০০-এর বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অভিযোগ ওঠে আইডিয়াল স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে অভিভাবকদের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছিল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা, প্রধান শিক্ষক আবদুস ছালাম খান, অফিস সহকারী দীপাসহ কিছু কর্মচারী ২০১৮ সালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্রে ঘষামাজা করে ভুল উত্তর রাবার দিয়ে মুছে সেখানে শুদ্ধ উত্তর লিখে ফেল করা শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগ পেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসককে তদন্তের নির্দেশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে ৬৯টি উত্তরপত্রে অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। ২০১৬ সালেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক তদন্তে ১ হাজার ৯৮১ জনকে অবৈধভাবে ভর্তি করার প্রমাণ পেয়েছিল। এসব ভর্তি বাণিজ্য ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম ছাড়াও তৎকালীন গভর্নিং বডির সদস্য গোলাম আশরাফ তালুকদারেরও নাম এসেছিল বারবার। বিভিন্ন সময়ে তদন্তে এ প্রতিষ্ঠানের অনিয়মও ধরা পড়ে। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে গোলাম আশরাফ তালুকদার পরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি নির্বাচিত হন। সেখানেও অনিয়মে জড়িয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক। সে অনুসন্ধান এখনো চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগমকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি