
শুক্রবার, ২৩ জুলাই ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় সংবাদ | দেশজুড়ে | ফটো গ্যালারী | বক্স্ নিউজ | রাজনীতি | শিরোনাম » করোনার ঝুঁকি সত্ত্বেও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি
করোনার ঝুঁকি সত্ত্বেও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি
একদিন পরই ঈদ-উল আজহা। তাই পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে করোনার ঝুঁকি সত্ত্বেও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। মহামারি করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধে পরিবহন, দোকান-শপিংমল অফিস আদালতসহ ইমাজেন্সি সার্ভিস ছাড়া সব বন্ধ ছিলো।
শর্তসাপেক্ষে গত মঙ্গলবার (১৫) জুলাই থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খোলে দেয় সরকার। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতিও দেয়া হয়। তবে কথা রাখেনি কেউ। আর বেঁধে দেয়া নির্দেশনাও জনসাধারণকে মানাতে পারেনি সরকার।
ঈদ ঘিরে সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্টান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় দেখা গেছে। অনেক জায়গায় টিকিটের জন্য ছিলো দীর্ঘ লাইন। সামাজিক দূরত্ব মানছেনা, স্বাস্থ্যবিধিও ছিল অনেকটাই উপেক্ষিত।
ঈদযাত্রায় গেল দুদিন যাত্রীর সঙ্গে ছিলো পরিবহনের চাপ, এর মধ্যে কোরবানীর পশুর চাপ ছিলো অসহনীয়। তবে গেল কয়েকদিনের চেয়ে আজকে চাপ অনেক বেশি মহাসড়কে। তবুও ভোগান্তি সঙ্গী করে বাড়ি ফিরছে মানুষ। দূরপাল্লার বাস ছাড়াও কেউ কেউ কাভার্ডভ্যানের ভেতরে অনেকটা বন্দি অবস্থায় বাড়ি যাচ্ছেন। এদিকে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে ফেরি ও লন্স্র কর্তৃপক্ষকে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
অতিরিক্ত যানবাহন ও ঘরমুখো মানুষের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আশেকপুর বাইপাস পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ। সারা বছরই এ নৌপথ দিয়ে হাজারো যানবাহন ও যাত্রী পারাপার হয়ে থাকে। তবে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে যানবাহন ও যাত্রীদের সমাগমে মুখর থাকে এই দুই ফেরিঘাট। তবে এবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ঢল ঠেকাতে প্রশাসন কাজ করছে। কিন্তু তাতেও কোনো কাজে আসেনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালে সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ১৮ জেলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে ১২০টি লঞ্চ। তবে, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে ৬টি লঞ্চের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিআইডব্লিটিএ। সরেজমিনে দেখা যায়, এই ঘাট এলাকায় কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। থামছেই না ঘরমুখো মানুষের ঢল।
হুড়োহুড়ি করে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা। আর এ পরিস্থিতি দেখে বোঝার উপায় নেই দেশে মহামারি চলছে।
নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে বাস টার্মিনালগুলোতেও। তবে, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে বাস কাউন্টারগুলোতে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। পাশাপাশি আসনে যাত্রী না বসানোর নির্দেশনা থাকলেও অনেকক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না।
এদিকে ভোগান্তি নিয়েই যে যেভাবে পারছেন নারীর টানে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কাভার্ডভ্যানের ভেতরে অনেকটা বন্দি অবস্থায় বাড়ি যাচ্ছেন।
সোহেল খান একজন দোকানি, কাজ শেষ করে ব্যাগ নিয়ে ছুটেছেন কুষ্টিয়া জেলার উদ্দেশ্য। তিনি বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, যেভাবেই হোক ঢাকা থেকে যেতে হবে ফেরিঘাটে। সেখানেও নাকি মানুষের উপচেপড়া ভীড়। পা ফেলার মতো জায়গা নেই, কিন্তু কি করার আছে, বাড়িতো যেতেই হবে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে পরিবহন চালানো এবং গাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা থাকলেও এসব নিয়মকে তোয়াক্কা না করে এসব গাড়ি চলছে।
এ বিষয়ে গাবতলী এলাকায় কর্মরত একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, এতো মানুষের চাপ সামলানো আমাদের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে পরেছে। সড়কে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভীড়। সামাজিক দুরত্বও উপেক্ষিত। কেউ কেউ মানলেও অনেকেই মানছে না।
রাহাত হোসেন হক একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন। কঠোর বিধিনিষেধ, তীব্র রোদ আবার কখনো বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বাড়ির পথে যাত্রা শুরু করেছেন। যাবেন দিনাজপুর।
রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে গাবতলী যাত্রা সুখের হলেও এরপর শুরু অনিশ্চিত যাত্রা আর পদে পদে ভোগান্তি। রাহাত বলেন, ঢাকায় একা থাকি, অনেকদিন বাড়িতে যাওয়া হয় না, একা ঈদ কীভাবে করবো? ঈদ তো বছরে দুবার আসে। কষ্ট হলেও বাড়িতে বাবা-মা , ছেলে সন্তান সঙ্গে নিয়ে ঈদ করবো।
এদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনেও দেখা গেছে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়। আন্তঃনগর ট্রেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার নিয়ম মানা হলেও লোকাল ট্রেনে ভোগান্তি ও বিশৃঙ্খলা চরমে। লোকাল ট্রেনে করোনা বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন ও শৃঙ্খলা নিশ্চিতে বাড়তি নজরদারির দাবি কর্তৃপক্ষের।
কঠোর বিধিনিষেধ নিয়ে গত ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন ২৩ জুলাই থেকে ১৪ দিনের লকডাউন আরও কঠোর হবে। এই সময়ে গার্মেন্টসহ সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।
ফরহাদ হোসেন বলেছেন, কুরবানিকে ঘিরে আমাদের বিশাল অর্থনীতি রয়েছে। অনেকে গরু প্রতিপালন করেছে। সবকিছু বিবেচনা করে চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করতে হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যতদিন ভ্যাকসিন দেওয়া না হয় ততদিন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ঈদের পর ১৪ দিন যে লকডাউন আসছে তা কঠোর থেকে কঠোরতর হবে।
দূরপাল্লার গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করায় ঈদের পর করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছানোর আশঙ্কা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এভাবে অবাধে চলাচল করায় ঈদের পর এর প্রভাব হয়তো ভয়াবহ হতে পারে। লকডাউন শিথিল করলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিলো এবং সেটি শতভাগ নিশ্চত করতে হতো।
প্রসঙ্গত, এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ঈদকে সামনে রেখে করোনার উচ্চ সংক্রমণের মধ্যেও চলমান কঠোর বিধিনিষেধ ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। তবে ঈদের পর আবারও ১৪ দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এতে বলা হয়, পবিত্র ঈদুল আযহা উদ্যাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে আরোপিত সকল বিধি-নিষেধ শিথিল করা হলো। তবে এ সময়ে সর্বাবস্থায় জনসাধারণকে সতর্কাবস্থায় থাকা এবং মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, করোনাভাইরাসজনিত রোগ সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনায় ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।