
শুক্রবার, ৯ এপ্রিল ২০২১
প্রথম পাতা » জাতীয় সংবাদ | ঢাকা | পজেটিভ বাংলাদেশ | ফটো গ্যালারী | বক্স্ নিউজ | মন্তব্য প্রতিবেদন / ফিচার | রাজনীতি | শিরোনাম | সম্পাদকীয় | সাক্ষাতকার | স্পেশাল রির্পোট » সাঈদুর রহমান রিমন আমার আধুনিক সাংবাদিকতার গুরু
সাঈদুর রহমান রিমন আমার আধুনিক সাংবাদিকতার গুরু
শামসুল আলম স্বপন
আমার সাংবাদিকতার গুরু মরহুম আলহাজ্ব ওয়ালিউল বারী চৌধুরী এবং জনাব আব্দুর রশীদ চৌধুরী । তাদের সম্পাদিত পত্রিকা সাপ্তাহিক ইস্পাত ও দৈনিক বাংলাদেশ বার্তায় ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পযর্ন্ত আমাকে কাজ করার সুযোগ দিয়েছিলেন এবং সংবাদ লেখার কলাকৌশল শিখিয়েছিলেন এই জন্য আমি দুইজন প্রথিতযশা দুইজন সাংবাদিকের কাছে কৃতজ্ঞ । ১৯৯৯ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের কালিদাসপুরে ঘটে যায় মর্মান্তিক হত্যা কান্ড । জাসদ নেতা কাজী আরেফ আহমেদসহ ৫ নেতাকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তখন আমি মনজুর এহসান চৌধুরী সম্পাদিত দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকার চীফ রিপোটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। তবে আমার অদম্য ইচ্ছা ছিল জাতীয় পত্রিকায় কাজ করার । তাও আবার জনাব মতিউর রহমান চৌধুরী সম্পাদিত বাংলাদেশের মডেল পত্রিকা বাংলাবাজার পত্রিকায়। সে সময় কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ছিলেন কনক চৌধুরী ।
কালিদাস পুরে হত্যাকান্ড ঘটে যাওয়ার পর বাংলাবাজার পত্রিকার চীফ ক্রাইম রিপোর্টার তরুন সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমনকে কুষ্টিয়াতে পাঠানো হয় নিউজ কভারেজের জন্য। তিনি কুষ্টিয়াতে এসে দৈনিক আন্দোলনের বাজার পত্রিকায় আমাদের সাথে পরিচিত হন। তার লেখা নিউজের প্রতি আমার ছিল ভীষণ দুর্বলতা । ভাবতাম রিমন ভাই এর মত যদি সংবাদ লিখতে পারতাম । মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমার সে প্রত্যাশা পুরন করলেন মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই। মিঠু চৌধুরী, এস,এম, হালিমুজ্জামান হালিম ও আমার সাথে রিমন ভাই এর সম্পর্কটা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলো।
কালিদাসপুর হত্যাকান্ডের ঘটনা সরেজমিন দেখার জন্য কুষ্টিয়ায় আসলেন তৎকালীন সময়ের জনপ্রিয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর রফিকুল ইসলাম । সাথে এলেন পুলিশের আইজিপিসহ র্উ্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থী-সন্ত্রাসী নির্মূলে কি ব্যবস্থা নেয়াযায় এ বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউজে মতবিনিময় সভা আহ্বান করলেন কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো: আনোয়ার হোসেন । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইলেন খুলনা বিভাগে চরমপন্থীদেও অভয়ারণ্য কেন ? উপস্থিত সাংবাদিকরা রাজনৈতিক নেতাদের এবং পুলিশের অবহেলার কথা তুলে ধরলো । আমার মনে হলো তিনি তাতে সন্তুুষ্ট হতে পারলেন না। আমি স্বরাষ্টমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বল্লাম আপনি যদি অভয় দেন তা হলে আমি কিছু তথ্য আপনাকে দিতে পারি। তিনি তার ভিজিটিং কার্ড আমাকে দিয়ে বললেন এতে আমার পার্সোনাল টেলিফোন নাম্বার আছে আপনার যদি কোন সমস্যা হয় আমাকে ফোন দিবেন।
তখন আমি বল্লাম এ অঞ্চলের আইন-শৃংখলা অবনতির জন্য খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি জনাব লুৎফুল কবীর দায়ি। স্বরাষ্টমন্ত্রী প্রশ্ন করলেন কেন ? আমি বল্লাম এ রেঞ্জের সকল ওসিকে প্রতি মাসে ডিআইজিকে মোটা অংকের মাসোহারা দিতে হয় । যে কারণে ওসিরা চরমপন্থী-সন্ত্রাসীদের দমনের চেয়ে ডিআ্ইজির ঘুষের টাকা যোগাড় করতে সময় ব্যয় করেন বেশী। এ কথা শুনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লেন বুঝেছি। ডিআইজি আমার উপর চটলেও খুশি হলেন এ অঞ্চলের পুলিশ সদস্যরা । পরের দিন যশোর থেকে সিনিয়র সাংবাদিক আজমল ফারাজী দৈনিক ইত্তেফাকে ডিআইজির গুনগান গেয়ে বিশাল সংবাদ লিখলেন । নিউজের হেডিং করলেন “ খুলনা রেঞ্জের পুলিশ বদলী আতংকে টতস্থ ” । আমি ডিআইজির বিরুদ্ধে যা বলেছিলাম তা মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য ওই নিউজের মাঝে বিভিন্ন মনগড়া তথ্য প্রদান করা হয় । ইত্তেফাকের সংবাদ পড়ে আমার মাথা গরম হয়ে গেল । আমি লিখলাম “ খুলনা রেঞ্জের পুলিশ ঘুষ আতংকে টতস্থ ” এই শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদের প্রতিবাদই বলা যায়। রিপোর্টটি রিমন ভাই এর হাতে দিলে তিনি পড়ে বললেন চমৎকার । আপনি জাতীয় পত্রিকায় কাজ করেন না কেন ? আমি বল্লাম সুযোগ পায়নি তাই। রিমন ভাই আন্দোলনের বাজার পত্রিকার টেলিফোন ব্যবহার করে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা অফিসে ফোন করে বার্তা সম্পাদক মুক্তাদির চৌধুরীকে অনুরোধ করলেন আমার লেখা সংবাদটি বাংলাবাজার পত্রিকায় প্রথম পাতায় প্রকাশ করার জন্য । পরের দিন লেখাটি আমার নামে প্রকাশিত হয়। সংবাদটি পড়ে আমি অভিভুত হলাম। কৃতজ্ঞতা জানালাম রিমন ভাইকে । সেই থেকে দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় কুষ্টিয়া প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি দীর্ঘদিন । ওই নিউজের কারণে ডিআইজি লুৎফুল কবীর চরম ক্ষুদ্ধ হলেন আমার উপর । পেন্ডিং মামলায় আমাকে গ্রেফতার করার জন্যও তিনি চাপ দিয়েছিলেন তৎকালীন কুষ্টিয়া সদর থানার ওসি আমার ক্লাশমেট শৈলকুপার সন্তান নজরুল ইসলামকে। বিষয়টি জানাজানি হলে তৎকালীন ডিআই-ওয়ান জনাব হাবিবুর রহমান ও এসপি মো: আনোয়ার হোসেন ডিআইজির সংগে আমার সম্পর্ক উন্নয়নে ভুমিকা রাখেন।
সে সময়ে চরমপন্থী-সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে বাংলাবাজার পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে সাঈদুর রহমান রিমন চরমপন্থীদের টার্গেটে পরিনত হন। তাকে কুষ্টিয়া শহরে দেখা মাত্র গুলি করারও নির্দেশ দেয় একটি চরমপন্থী সংগঠন। ঢাকা যাওয়ার সকল রাস্তায় বসানো হয় রেকিম্যান । পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে আমি একটি মটর সাইকেলে রিমন ভাইকে মাঝে ছড়িয়ে পেছনে সাংবাদিক হালিমকে উঠিয়ে দুপুর বেলা ঢাকা রোড ধরে বিকেলে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে রিমন ভাইকে পৌছে দিই ।
আমি “চরমপন্থী-সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য কুষ্টিয়া” শিরোনামে বাংলাবাজার পত্রিকায় যে ২১টি সিরিজ নিউজ করেছিলাম তার প্রেরণা যুগিয়েছিলেন মো: সাইদুর রহমান রিমন ভাই । আমি তার সংবাদ লেখার ধরন রপ্ত করার কারণেই হয়তো বিদগ্ধ পাঠকের মনজয় করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তাই আমি নির্দিধায় স্বিকার করি রিমন ভাই আমার বয়সে ছোট হলেও তিনি আমার আধুনিক সংবাদ লেখার কলাকৌশলের গুরু । তার তথ্যবহুল সংবাদের কারণে মেজর সিনহা হত্যা মামলা থেকে নিস্কৃতি পায়নি মাদককারবারী ওসি প্রদীপ কুমার । নিউজ পড়ে অনেকেই রিমন ভাইকে উপহাস করে বলেছিলেন রিমন মনগড়া সংবাদ লিখেছে । কিন্তু প্রমাণ হলো রিমন ভাই এর লেখা সংবাদই সঠিক। এমন হাজারো সংবাদ লিখে তিনি দেশবাসীর মন কেড়েছেন। আর দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের ঘুম হারাম করে তাদের শত্রুতে পরিনত হয়েছেন। সেই রিমন ভাই দেশের মানুষের কল্যাণে এবং পাঠকদের চাহিদা পুরনের জন্য “দৈনিক দেশপত্র ” পত্রিকা সম্পাদনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন তাতে আমি গর্বিত। আমি বিশ^াস করি দেশপত্র পত্রিকাটি বিজ্ঞাপন নির্ভর পত্রিকা হবে না । দেশপত্র হবে বিদগ্ধ পাঠকের আস্থার পত্র।