
বুধবার, ৮ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » জাতীয় সংবাদ | বক্স্ নিউজ | রংপুর | রাজনীতি | শিরোনাম | স্পেশাল রির্পোট » পরিশ্রমেই সৌভাগ্যের প্রসূতি
পরিশ্রমেই সৌভাগ্যের প্রসূতি
রুহানা ইসলাম ইভা.
ডোমার উপজেলা প্রতিনিধিঃ স্বাধীনতার আগে থেকে দেশের প্রায় প্রতিটি জায়গায় নারী জাতির উপর দিনের পর দিন অমানসিক নির্যাতন, জুলুম ও জোরপূর্বক তাদের দাসী বানিয়ে রাখার মতো নির্মম কাজ করে আসছিল দেশের কিছু অসাধু ব্যক্তিরা। কিন্তু, স্বাধীনতার পর থেকে সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে নারীদের দিকে। দিন যত যেতে থাকে, মানুষের চিন্তাধারা ততই বদলাতে শুরু করে। যার ফলে, বর্তমানে এখন নারী জাতিকেই সবার উপরে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের এমনও অনেক জায়গা আছে, যেখানে নারীদের স্বর্বস্তরে রাখা হয় এবং বাংলাদেশ তারি মধ্যে একটি। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও রয়েছে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের জায়গা। এই দেশের নারীরা কৃষিকাজ থেকে শুরু করে কামার, কুমার, কাপড় ব্যবসায়ী, হাড়ি-পাতিল বিক্রি, বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে মাথায় ঢাকি নিয়ে কসমেটিকস বিক্রি, দর্জিগিরি ইত্যাদি কর্মকান্ড করে থাকে। দেশের অনেক নারী আছে, যারা এইসব কর্মকান্ড করে জীবনযুদ্ধে জয় হয়ে, পরিবার নিয়ে এখন সুখে জীবন-যাপন করছে।
এমনি এক নারী আছে যিনি তার কষ্টের সময় হাসিমুখে পার করে, এখন সুখে জীবনযাপন করছে। নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার ভোগডাবুরী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড থানা বাজার এলাকা সংলগ্ন পূর্ব খানকাপাড়া এলাকার আশরাফুল ইসলাম (৫৫)-এর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা (৪৫) যিনি জীবনের সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে পরিবার-পরিজন ও সন্তানদের নিয়ে সুখের জীবন কাটাচ্ছেন। জানা গেছে, আয়শা সিদ্দিকা গোসাইগঞ্জ এলাকার মনছুর আলীর ৪র্থ কন্যা। আয়শা সিদ্দিকার সাথে কথা হলে তিনি বলেন,“আমরা ৪ বোন ও ২ ভাই। ভাই-বোনদের মধ্যে আমি সবার ছোট। ১৫ বছর বয়সে আমার বাবা-মা আমার বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের পর স্বমীর সংসারে এসে বুঝতে পেরেছি অভার কি জিনিস এবং ২ বছর পর আমি প্রথম সন্তানের জননী হই। তারপর থেকেই আরো বেশি পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। কারন, আমার স্বামী যা রোজগার করতো, তা দিয়ে অনেক কষ্টে আমাদের সংসার চলত। এভাবে কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর আমি ঠিক করলাম যে আমি কাপড় সেলাইয়ের কাজ করবো। কারন, ছোটতে আমি আমার বাবার কাছে সেলাইয়ের কাজ শিখেছিলাম। তারপর আমার বাবার দেওয়া ১টি সেলাই মেশিন দিয়ে নিজের বাড়িতেই আমি কাজ করা শুরু করি। তারপর শুরু হয় আমার জীবনের আসল পথচলা। বাড়ির এক কোনায় ছোট্ট একটা জায়গার মধ্যে সেলাই মেশিনের সাথে সাথে থান কাপড় বিক্রি করা শুরু করি। দিন যতই যেত একটু একটু করে দোকান বড় করতে লাগলাম। প্রায় ১৬/১৭ বছর ধরে আমি কাপড় সেলাইয়ের কাজ করছি। আর এখন আমি এই কাপড়ের ব্যবসা করে ২০ শতক জমি কিনে বাড়ি করেছি, বাড়ির সামনে বড় করে কাপড়ের দোকান দিয়েছি এবং ৪টি মেয়ে আমার দোকানে কাজ করে। কাপড়ের দোকানের পাশাপশি কসমেটিকস ও সেন্ডেল বিক্রি করি। আমাকে সাহায্য করার জন্য আমার বড় ছেলে লেখাপড়ার পাশাপাশি বাইরে চাকরি করে। জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট দুর করে স্বামী ও ৪ ছেলে সন্তানদের নিয়ে এখন অনেক সুখে জীবন যাপন করছি”।
আয়শা সিদ্দিকার মতো আরো অনেক নারী আছে যারা এভাবেই হার না মেনে জীবনের প্রতিটি যুদ্ধে জয়লাভ করে, পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছে। নারী ক্ষমতায়নকে যে ব্যক্তি দূর্বল বলবে, পৃথিবীতে সেই ব্যক্তিটাই সব থেকে বড় দূর্বল। কারন, নারীরা হারতে নয় বরং জিততে শিখেছে। তাই তো আজ সারাবিশ্ব সহ বাংলাদেশের নেতৃত্ব সহ সকল মন্ত্রনালয়ে নারীরাই কাজ করছে। এই রকম সাহসী ও নিষ্ঠাবান নারীদের দেখলে বলতেই হয়,“নারী শক্তির জয় হোক”।