
বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » আজব দুনিয়া | আর্ন্তজাতিক | মন্তব্য প্রতিবেদন / ফিচার | স্পেশাল রির্পোট » দেবভূমিতে নরকের সড়ক
দেবভূমিতে নরকের সড়ক
বিজয় নিউজ : হিমাচল প্রদেশের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের জন্ম ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর। একই বছর হিমাচল প্রদেশ রাজ্য আইন অনুযায়ী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অষ্টাদশ রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মূলত এই প্রদেশের আরেকটি নামও রয়েছে- ‘দেবভূমি’। কিন্তু এই দেবভূমি জুড়ে রয়েছে নরকের সড়ক। মূলত ভারতের চণ্ডিগড় থেকে শুরু। এরপর এই সড়ক শিমলা হয়ে পৌঁছে গেছে চীনের বর্ডার পর্যন্ত। সারা বিশ্বের পর্যটকদের জন্য হিমাচল প্রদেশ অনেকটাই স্বর্গ রাজ্য। হিমালয়ের সাদা সফেদ তুষার এখানকার পর্বতগুলোর মাথায় মুকুটের মতো হয়ে আছে। তবে এই স্বর্গের পথে রয়েছে পদে পদে বিপদ। প্রতিটি সড়কই পাহাড় কেটে তৈরি। কোথাও পাহাড়ি রাস্তা এমন বাঁক নিয়েছে যে, যে কোনো সময় বাস গভীর খাদে পড়ে মৃত্যু নিশ্চিত। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সড়ক শুরু হয় শিমলা যেতে আইবিপিটি সীমান্ত থেকে। ভারতের এই প্রদেশে দুর্ঘটনার হার অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু প্রকৃতি সৌন্দর্য পিপাসুরা কি বসে থাকেন ঘরে! না, দেবভূমি যেতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এই নরকের পথ পাড়ি দিয়ে হাজির হন শিমলা, মানালি ও ধর্মশালাতে।
এই শহরে গোর্খাদের জয়জয়কার। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় তাদেরই। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরুর আগের দিন রাতে ধর্মশালা ঘুরে দেখা যায় এই শহরে নীরবতা নেমে আসে সন্ধ্যার পর পরই। রাত ৮টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় প্রায় সব দোকানপাট। ধর্মশালার ভারদোয়াজ নামে এক পর্যটক এসেছেন দিল্লি থেকে। নিজের দেশের এই জায়গাটিতে তার এর আগে আসা হয়নি। কয়েকবার আসার চেষ্টা করেও পরিবারের বাধার মুখে তিনি আসতে পারেনি। কারণ পরিবারের ভয় ছিল এখানকার সড়ক পথ নিয়ে। এবার অবশ্য তাকে আসতে দিয়েছেন আকাশ পথে ভ্রমণ করায়। কিন্তু পরিবার থেকে মানা কোনো ভাবেই যাওয়া যাবে না শিমলা-মানালি। ভারদোয়াজ কি আর রোখার লোক! একবার সুযোগ পেয়েছেন, তিনি যাবেনই শিমলা। তবে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটি দেখেই যাবেন বলে জানালেন। তিনি হিন্দিতে যা বললেন তার অর্থ দাঁড়ায়- ‘আমিতো সুন্দর সুন্দর জায়গাতে ঘুরতে পাগল। সুযোগ পেলেই বছরে দুবার ছুটে যাই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গাতে। অনেক বছর ধরে হিমাচল প্রদেশে আসতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার বউ আর মা-কি যে বলবো ভয়ে আসতে দেয় না। এর অবশ্য কারণও আছে, আমার বাবা শিমলা যাওয়ার পথেই সড়ক দুর্ঘটনাতে মারা যান। কিন্তু আমি এবার এসেছি বিমানে। তাই আসতে দিয়েছে। তবে শিমলা যেতে বারণ। আমি যাবই, এত সুন্দর জায়গা না গেলে মরেও শান্তি পাবো না। আমার বাবাও হয়তো শান্তি পেয়েছিল।’
হিমাচল প্রদেশ উত্তর ভারতের একটি ক্ষুদ্র রাজ্য। আয়তন ২১,৪৯৫ বর্গমাইল (৫৫,৬৭২ বর্গকিলোমিটার)। এর সীমান্তে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য; পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিমে পাঞ্জাব রাজ্য; দক্ষিণে হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশ রাজ্য; দক্ষিণ-পূর্বে উত্তরখণ্ড রাজ্য ও পূর্বে তিব্বত অবস্থিত। অ্যাংলো-গোর্খা যুদ্ধের পর এই অঞ্চল বৃটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের অধীনস্থ হয়। ১৯৫০ সালে হিমাচল একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষিত হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা হিমাচল প্রদেশের জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ। অনুপাতের হিসেবে এই সব রাজ্যের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন স্থানীয় ভূস্বামীরা। এই সকল ভূস্বামীদের অনেকেই ছিলেন রাজপুত রাজকুমার। এই রাজ্যগুলি ছিল স্বাধীন রাজ্য। পরে বিভিন্ন সময়ে মুসলমানদের আক্রমণকারীদের হাতে এই রাজ্যগুলি তাদের স্বাধীনতা হারায়। দশম শতাব্দীর প্রথম ভাগে মামুদ গজনভি কাংড়া জয় করেন। ১৭৬৮ সালে যোদ্ধা উপজাতি গোর্খারা নেপালে ক্ষমতায় আসে। তারা তাদের সামরিক বাহিনীকে একত্রিত করে রাজ্যসীমা বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করেন। ধীরে ধীরে গোর্খারা সিরমৌর ও শিমলা দখল করে নেয়। অমর সিংহ থাপার নেতৃত্বে গোর্খারা কাংড়া আক্রমণ করে। ১৮০৬ সালে একাধিক স্থানীয় শাসকের সহযোগিতায় তারা কাংড়ার শাসক সংসার চন্দকে পরাজিত করতে সক্ষম হন। যদিও গোর্খারা কাংড়া দুর্গ দখল করতে পারেনি। এই দুর্গটি ১৮০৯ সালে মহারাজা রঞ্জিত সিংহের অধিকারে আসে। পরাজিত হয়ে গোর্খারা দক্ষিণে রাজ্যবিস্তারে মনযোগ দেয়। এরপর অবশ্য তারাও ক্ষমতা হারায়।