
সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » অনিয়ম-দুর্নীতি | জাতীয় সংবাদ | বক্স্ নিউজ | রাজনীতি | শিরোনাম » গড়েছেন সম্পদের পাহাড় ফেঁসে যাচ্ছেন ১৭ এমপি
গড়েছেন সম্পদের পাহাড় ফেঁসে যাচ্ছেন ১৭ এমপি
Bijoynews : আওয়ামী লীগের শুদ্ধি এই অভিযানে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন বড় বড় নেতা ধরা পড়েছেন। এমনকি ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ব্যাংকের হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এদিকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী আশফাহ্ হকের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ নজিরবিহীন এক অভিযান শুরু করেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তাদের হিসাবে বিভিন্ন ব্যাংকে কী পরিমাণ টাকা জাম আছে, এসব হিসাবে কারা টাকা জমা দিয়েছে ও উত্তোলন করেছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একটি ব্যাংক হিসাবের অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর স্থগিত করা হয়েছে।তথ্য মতে, আরো অন্তত ২৩ জন সংসদ সদস্যের ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। তারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কি কি টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস এবং অবৈধ লেনদেনসহ যে সমস্ত অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন, সেগুলোর ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।
সূত্রে দেখা যাচ্ছে যে, প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে ১৭জন এমপি ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। গোয়েন্দা সূত্রে আরো জানা গেছে, যে ১০জন এমপি হঠাৎ করে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, অন্যের ভূমি দখল, টেন্ডারবাজি, বিদেশে অর্থপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে তাদের ব্যাংক হিসাব তলবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। যে কোন দিন তাদের ব্যাংক হিসাব সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নোটিশ জারি হবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, যেসব এমপির ব্যাংক হিসাব তলব করা হবে, তাদের মধ্যে চারজনই ঢাকার। এদের মধ্যে দুজন রয়েছেন চট্টগ্রামের এমপি। রাজশাহী অঞ্চলের এমপি রয়েছেন তিনজন। তবে যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে তাদের কেউ মন্ত্রী নন।আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু তারা প্রভাবশালী সংসদ সদস্য। কাজেই সবকিছু যাচাই বাছাইয়ের পরই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এদিকে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঠিকাদার জি এম শামীম, কৃষকলীগের নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াসহ আরো বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী তার সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন। রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযানের পর থেকে অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আত্মগোপনে গিয়ে লাভ হবে না, এরা ধরা পড়বেই।সূত্র-বাংলাদেশ জার্নাল
এদিকে লন্ডনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাজমুলের ৪ কোম্পানি!বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী’ নাজমুল আলম যুক্তরাজ্যের লন্ডনে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ছাত্র রাজনীতিতে সততার কথা বলা এবং নিজেকে একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান দাবি করা এই সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমানে লন্ডনে বেশ কয়েকটি কোম্পানির মালিক।
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ সরকারের কাছে নাজমুলের কোটি কোটি টাকার নিবন্ধিত বিনিয়োগ রয়েছে। তার নামে ব্রিটেনের কোম্পানি হাউজে আবাসন, গাড়ির অ্যাক্সিডেন্ট ক্লেইম ম্যানেজমেন্ট, পণ্যের পাইকারি বিক্রেতা, বিজ্ঞাপন, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান, সেবা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের ছয়টি কোম্পানির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে দুটি কোম্পানির পরিচালক পদে তার নাম নেই। বাকি চারটি কোম্পানির মধ্যে একটির একক পরিচালক এবং আরও তিনটি যৌথ পরিচালক হিসেবে তিনি রয়েছেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যমতে বর্তমানে সিদ্দিকী’ নাজমুল আলম বিনিয়োগকারী ভিসায় যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ব্রিটিশ সরকারের আইন অনুযায়ী, এই ভিসা পেতে ন্যূনতম দুই লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় দুই কোটির বেশি) বিনিয়োগ করতে হয়।
ব্রিটেনে নাজমুলের বিলাসবহুল জীবন ও আর্থিক উৎসের নানা কাহিনী নিয়ে খোদ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেই এখন কানাঘুষা চলছে। লন্ডনে তার বিভিন্ন ব্যাবসা-বাণিজ্যের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, ফ্লেক্সফগ লিমিটেড, এলিট সিটি লিমিটেড, নাজ ইউকেবিডি প্রোপার্টিজ লিমিটেড, এসএনবি অটোস লিমিটেড, এসএনআর ইউকে বিডি লিমিটেড ও কার মিউজিয়াম লিমিটেড নামে ছয়টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন।
এর মধ্যে ইস্ট লন্ডনের কেনন স্ট্রিট রোডে নাজ ইউকেবিডি প্রোপার্টিজ নামের আবাসন ব্যবসার একক পরিচালক তিনি। যার মূলধন দেখানো হয়েছে সাড়ে আট লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি টাকায় যা ১০ কোটি টাকার সমান।
কোম্পানিটি ২০১৮ সালের ১০ জুলাই ব্রিটিশ সরকারের কোম্পানি হাউজে ১১৪৫৮১৯৯ নম্বরে নিবন্ধিত হয়। এখানে ব্যবসার ধরন হিসেবে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়। নিজস্ব প্রোপার্টি কেনাবেচা, লিজ অথবা নিজস্ব প্রোপার্টি ভাড়া দেওয়া এবং পরিচালনা করা, রিয়েল এস্টেট এজেন্সি এবং চুক্তির অথবা ফি এর মাধ্যমে প্রোপার্টি পরিচালনা করা।
টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন রোডের পাশে পান্ডারসন গার্ডেনে রয়েছে ফ্লেক্সফগ লিমিটেড নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিস। যেটি ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি কোম্পানি হাউজে ০৮৮৬৮৬৮১ নম্বরে নিবন্ধন করা হয়।
এই ব্যবসার ধরন দেখানো হয়েছে নন স্পেশালাইড হোলসেল ট্রেড, অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সি এবং অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সেবা। যা আগে লিঙ্কমোর ইউকে লিমিটেড নামে পরিচিত ছিল। এই কোম্পানিতে সিদ্দিকী’ নাজমুল আলম এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। কোম্পানিতে আরও দু’জন পরিচালক রয়েছেন।
তৃতীয় কোম্পানি এলিট সিটি লিমিটেড। এটি সেন্ট্রাল লন্ডনের বসওয়েল স্ট্রিটে অবস্থিত। এই কোম্পানিটি ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট কোম্পানি হাউজে ১১৫২১৪৭৩ নম্বরে নিবন্ধিত হয়।
এই কোম্পানির ব্যবসার ধরন হচ্ছে এমপ্লয়মেন্ট প্লেসমেন্ট এজেন্সি ও টেম্পোরারি এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি এক্টিভিটিস। এই কোম্পানির জন্মলগ্ন থেকে সিদ্দিকী’ নাজমুল আলম মোহাম্ম’দ রুহুল আমিনের সঙ্গে যৌথ পরিচালক হিসেবে আছেন।
চতুর্থ কোম্পানি এসএনবি অটোস লিমিটেড বেথনাল গ্রিনের ২৫ পান্ডারসন গার্ডেনে অবস্থিত। এই প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ১০১৩৭১৫১ নম্বরে কোম্পানি হাউজে নিবন্ধিত হয়।
এই কোম্পানির ব্যবসার ধরন হিসেবে বলা হয়েছে রেন্টিং অ্যান্ড লিজিং অব কারস্ অ্যান্ড লাইট মোটর ভেহিক্যাল। শুরু থেকে এই প্রতিষ্ঠানেরও পরিচালক হিসেবে আছেন নাজমুল এবং মোহাম্ম’দ রুহুল আমিন।
এছাড়া এসএনআর ইউকে বিডি লিমিটেডে (১০৫১৭৩৫৮ কোম্পানি নম্বর) ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর নাজমুল পরিচালক হিসেবে যোগ দিলেও ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি তিনি পদত্যাগ করেন।
একইভাবে কার মিউজিয়াম লিমিটেডে (১০২৫৪৪২২ কোম্পানি নম্বর) ২০১৬ সালের ২৮ জুন পরিচালক পদে যোগ দিয়ে তিন দিনের মাথায় ২০১৬ সালের ১ জুলাই পদত্যাগ করেন তিনি।
তবে নাজমুল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘নাজ ইউকে বিডি কোম্পানিটি কেনন স্ট্রিটের একটি ঠিকানায় কোম্পানি হাউসে নিবন্ধন করেছিলাম। এসএনবি অটোস নামের কোম্পানিটিতে এক বন্ধু ওয়ার্কিং ডিরেক্টর হিসেবে রেখেছিলেন।
এছাড়া এলিট সিটি নামের কোম্পানিটি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, তবে এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। আর ফ্লেক্সফগ নামের কোম্পানিটি আইটি ব্যবসার। কোম্পানিটি এক বন্ধু খুলেছেন। আমাকে পার্টনার হিসেবে রেখেছেন।’ এসব কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি বলে দাবি নাজমুলের।
নাজ ইউকেবিডি প্রোপার্টিজের মূলধনের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নাজমুল বলেন, ‘ব্রিটেনে কোম্পানি হাউজে কোনও কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে কিছু তথ্য দিতে হয়।’ এ কোম্পানির মূলধন সাড়ে আট লাখ পাউন্ড দেখানো হলেও তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।
নাজমুল আরও বলেন, লন্ডনে তিনি ব্যবসার পাশাপাশি লেখাপড়া করছেন। তবে কোন ভিসায় ব্রিটেনে বসবাস করছেন সে তথ্য জানাতে অ’পারগতা প্রকাশ করেন। বলেন, ‘খুব ক’ষ্ট করে রাজনীতিতে একটা অবস্থানে এসেছি, আমা’রও প্রতিপক্ষ আছে।’ সাংবাদিকদের তার বিরুদ্ধে কিছু না লেখারও অনুরোধ জানান সাবেক এই ছাত্র নেতা।