
মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ জগত | জাতীয় সংবাদ | বক্স্ নিউজ | রাজনীতি | শিরোনাম | সম্পাদকীয় | স্পেশাল রির্পোট » পুলিশের চরিত্র বলে কথা ?
পুলিশের চরিত্র বলে কথা ?
: শামসুল আলম স্বপন :
পুলিশের চরিত্র নিয়ে কথা বলতে হলে আগে পুলিশ সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার । যতদুর জানাযায় বৃটিশ শাসনামলে ইংরেজ শাসকদের জনরোষ থেকে রক্ষা করা এবং তাদের হুকুম তামিল করার জন্যই এ দেশে সৃষ্টি করা হয়েছিল পুলিশ বাহিনী।
যদিও তারা পুলিশের আক্ষরিক বিশ্লেষণ করেছিল এই ভাবে -
Police :
১. পোলাইট
২. অবিডেন্ট
৩. লয়াল
৪. ইনটেলিজেন্ট
৫. সিনসিয়ার
ও
৬. ইফিসিয়েন্ট ।
কিন্তু বৃটিশ শাসকরা পুলিশের গুনবাচক নাম দিলেও
তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ ছিল পুলিশের চরিত্র হনন করা । যেমন সে সময় পুলিশকে ১ মিনিটে ৬০টি জঘন্য গালি বলতে শেখানো হত । “শুয়োরের বাচ্চা ” বলা ছিল কম জঘন্য ভাষা । তারা মানুষের উপর এ সব অশ্লীল ভাষা নির্দ্বেধায় প্রয়োগ করতো। বেতন / ভাতা ছিল নাম মাত্র । যে কারণে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ-দুর্নীতি ও অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়েছিল সেই বৃটিশ আমল থেকেই । সেই ধারাবাহিকতা কম-বেশী আজও রয়েছে আধুনিক পুলিশের মধ্যে । কুষ্টিয়ার সাবেক সদর সার্কেল এএসপি বেলাল হোসেন তার কোর্টপাড়ার অফিসে আমার সাথে আলাপকালে এক পর্যায়ে রসিকতা করে বলেছিলেন স্বপন ভাই আমরা কিন্তু এখন “বাংলা পুলিশ” । এর মানে জানতে চাইলে তিনি হাসির ছলে বললেন, বাংলা পুলিশ মানে পাজির ‘প’,লুচ্চর ‘ল’ আর শয়তানের ‘শ’। পুলিশের চরিত্র বলে এখন আর কিছু নেই । তিনি আফসোস করে বললেন পুলিশে আসাটায় আমার ভুল হয়েছে।
পুলিশের চরিত্র পাল্টানোর জন্য বিগত দিনের সকল সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিলেও খুব বেশী একটা কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। এ ব্যাপারে আমার পরিচিত একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেছিলাম উন্নত দেশে সকল মানুষই পুলিশকে শ্রদ্ধা করে কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ পুলিশকে কেন ঘৃণা করে ? নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বললেন পুলিশ হতে হলে চাকরি নেয়ার সময় রাজনৈতিক নেতা কিংবা উর্ধতন কর্মকর্তাকে বাপের জমি বেঁচে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দেয়া লাগে তখন ওই পুলিশ বেচারীর কাছে কোন নৈতিকতা থাকে না । মিঠুন চক্রবর্তীর ডায়ালোগ আওড়িয়ে তিনি বললেন “ নিম গাছ লাগিয়ে আম খাওয়ার স্বপ্ন দেখবেন” এটা তো হতে পারে না। তিনি আরো জানালেন চাকরি পাওয়ায় শেষ কথা না । ট্রেনিং প্রিয়ডে পদে পদে ঘুষ দেয়া লাগে । তা না হলে রেজাল্ট খারাপ । ভালো পোষ্ট পেতে হলে দিতে হবে ঘুষ । ভালো পোষ্টিং এর জন্যও ঘুষ। তা হলে বলুন পুলিশ কি করবে ? এ সব সামাল দিতে ঘুষ খাওয়া ছাড়া কি করবে ।
এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কি জানতে চাইলে তিনি বললেন আমাদের সকলকে সৎ হতে হবে। টাকা পয়সা নয় যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি দিতে হবে । পুলিশকে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে জনগনের বন্ধু হিসেবে গড়ে তুলতে হবে । পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। তাদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এরপর কেউ যে কোন ধরণের অপরাধ করলে সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সব পুলিশ যে খারাপ তা ঢালাও ভাবে বলা যাবেনা । পুলিশের মাঝে অনেক ভালো ও সৎ পুলিশ আছে। কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি শাহাবুদ্দিন খান কুষ্টিয়ার বর্তমান পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতের মত অনেক ভালো পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য রয়েছে আমাদের পুলিশ বাহিনীতে। যারা সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি একজন এমপি বলেছেন, পুলিশের বেতন/ভাতা দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই । তাদের শুধু পোষাক দিলেই চলবে। আমি মনে করি একজন দায়িত্ববান মানুষের এমন দায়িত্বহীন কথা বলা উচিৎ হয়নি। প্রজাতন্ত্রের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারি ঘুষ-দুর্ণীতিতে জড়িত হতে না পারে সে ব্যাপারে সংসদে আইন পাশ করুন। শুধু পুলিশের দোষ দিয়ে কি আমরা পার পেয়ে যাবো ? পুলিশের অপরাধটা আমাদের চোখে পড়ে কিন্তু তারা যে অমানুষিক ও অমানবিক পরিশ্রম করে আমরা কি তার কোন মূল্যায়ন করি ?
ধরুন আপনার স্ত্রী আপনার সাথে পারিবারিক কলহের কারণে রাত আনুমানিক ১টার দিকে কোন দুর্গম ও নির্জন বাগানে যেয়ে গলায় রশি নিয়ে আত্মহত্যা করলো ( দু:খিত এমনটি প্রত্যাশা করি না ) । আপনি তো থানায় খবর দিয়েই দায়িত্ব শেষ করলেন । কিন্তু একজন পুলিশ অফিসার সঙ্গীয় ফোর্সসহ এসে গাছ থেকে লাশ নামিয়ে সুরৎহাল করে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাতে চেয়ে দেখলেন রাস্তাটি চরম কর্দমাক্ত । যেখানে গাড়ি চলা তো দুরের কথা ভ্যান রিক্সা পর্যন্ত চলে না। দিনের আলো ছাড়া সেখানে কোন বাহন নেয়া সম্ভব না। আপনি কি সারারাত আপনার মৃত স্ত্রীকে পাহারা দিতে পারবেন ? কিন্তু আপনার স্ত্রী সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকলেও একজন পুলিশ সারারাত ওই মৃত নারীকে পাহারা দিতে বাধ্য। আপনাকে যদি পুলিশের সাথে আপনার স্ত্রীর লাশ পাহারা দিতে বলে তো আপনি কি করবেন ? বাস্তব ইতিহাস কিন্তু এমনটিই ।
পুলিশের অক্লান্ত পরিশ্রম করা এবং মানুষ সেবার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে । সব পুলিশ যেমন খারাপ না তেমন সব রাজনৈতিক নেতাও খারাপ না। তবে যারা খারাপ তারা যদি নিজে খারপ হয়ে অন্যের সমালোচনা করেন তারাই মুলত খারাপ ।
আমি কিন্তু পুলিশের পক্ষে দালালী করার জন্য কিংবা তাদের অপকর্ম জায়েজ করার জন্য এ লেখাটি লিখছি না। আমরা যারা পুলিশের বেতন/ভাতা বন্ধ করে তাদের শুধু পোষাক দেয়ার কথা বলে বাহবা নিতে চাচ্ছি তাদের উচিৎ নিজে সৎ হওয়া। আপনি নিজে মিষ্টি খাবেন অথচ অন্যকে খেতে দিবেন না এটা হতে পারে না। আগে নিজে মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করুন। যেমনটি করেছিলেন মানবতার কান্ডারী মহানবী (সা.)।