
বুধবার, ৪ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » বক্স্ নিউজ | বরিশাল | শিরোনাম » পিরোজপুরে দুই সরকারী চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে
পিরোজপুরে দুই সরকারী চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে
বিজয় নিউজ: পিরোজপুর প্রতিনিধি
পিরোজপুরে একটি সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের দুই চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। একজন চিকিৎসকের বাসায় চুরি ঘটনায় একই বিভাগের অপর এক চিকিৎসকে প্রধান আসামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় চুরি মামলা দায়ের করা হয়ছে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে বি এম এ’র সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি মৌন মিছিল পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জেলা মাতৃ সদন ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ডা: সাহেলা আক্তারের সরকারি বাস ভবনে গত শুক্রবার দিনের বেলা এ চুরির ঘটনায় একই কেন্দ্রের ডা: এইচ পি সিকদারকে প্রধান আসামী করে একই কেন্দ্রের অপর চার জনকে আসামী করে মামলাটি দায়ের করেন ডা: সাহেলা বেগম। এ নিয়ে পিরোজপুরে তোলপার চলছে।
থানায় এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল শুক্রবার ডা: সাহেলা আক্তার খুলনা থাকা কালিন অবস্থায় মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ভিতরে সরকারি বাস ভবনে তালা ভেঙ্গে আসামীরা নগদ ২ লাখ টাকা, ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার সহ আনুমানিক ১৫ লক্ষাধীক টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় বলে বাদী থানার মামলায় উল্লেখ করে।
এ দিকে এ চুরি মামলার প্রতিবাদ এবং ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য মামলার প্রধান আসামী ডা: এস পি সিকদার মঙ্গলবার দুপুরে বিভিন্ন ক্লিনিক মালিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক, নার্সিং ইনিষ্টিউটের শিক্ষার্থী এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মচারীদের নিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বাদী সাহেলা আক্তারের বিরুদ্ধে একটি মৌন মিছিল পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন বিএমএ, পিরোজপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা: মিজানুর রহমান বাদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর হাসপাতালের আর এম ও ডা: ননী গোপাল রায়, জিয়ানগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: শংকর কুমার ঘোষ। পুলিশ সুপার মো: ওয়ালিদ হোসেন স্মারকলিপি পাবার কথা স্বীকার করেন।
একজন সরকারি ডাক্তারের বাসায় চুরির ঘটনায় অপর একজন সরকারি ডাক্তারসহ নার্স ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারিদের বিরুদ্ধে মামলায় করায় পিরোজপুরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার বাদি ডা: সাহেলা আক্তার জানান, স্থানীয় একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে আমাকে পিরোজপুর থেকে তাড়ানোর জন্য বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। শুক্রবারের আমার বাসয়ায় চুরির ঘটনা এ ষড়যন্ত্রেরই অংশ। চক্রটি পরিকল্পিতভাবে এ চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে। ডা. সাহেলা আক্তার আরো অভিযোগ করেন, তার সরকারি বাসভবনে দিনে দুঃসাহসিক চুরি ছাড়াও বাসার বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর নেপথ্যে রয়েছেন একই দপ্তরের ডা. এইচ পি সিকদার। এ বিষয়ে জানতে ডা. এইচ পি সিকদারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার মাথা ঘুরছে। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না।’
পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো. এস এম মাসুদ উজ জামান বলেন, ‘থানায় একটি চুরির মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’
জানা গেছে, জেলায় ক্লিনিক ব্যবসা রমরমা করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র তৎপর। নারী চিকিৎসক এলে তাকে যে কোনো উপায়ে পিরোজপুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র ছাড়তে বাধ্য করে চক্রটি। বেশ কয়েকমাস ধরে পিরোজপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের প্রধান ডাক্তার শাহেলা আক্তারকে অপসারণ করার জন্য মা ও শিশু কেন্দ্রের এক চিকিৎসকসহ কেন্দ্রের সুবিধালোভী কয়েকজন ষ্টাফ নানাভাবে চক্রান্ত করে আসছে। স্থানীয় ভাবে বেসরকারী ক্লিনিক ব্যবসা রমরমা করার উদ্দেশ্যে তারা পিরোজপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রকে অকার্যকর করে রাখার লক্ষেই একটি মহলের ষড়যন্ত্রে এ কেন্দ্র মহিলা ডাক্তার উচ্ছেদের পায়তারা চলছে। এর আগেও মহিলা ডাক্তার এলে তাকে যে কোন উপায়ে পিরোজপুর ছাড়তে বাধ্য করতো এই চক্র। ডাক্তার শাহেলা আসার পর থেকে এদের সাথে বিভিন্ন সময়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।
এদিকে, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বিরোধের জের উর্ধ্বতন মহল পর্যন্তও গড়িয়েছে। দফায় দফায় তদন্তও হয়েছে। স্থানীয় সুশিল সমাজ উপ-পরিচালকের কাছে দাবী তোলে মা ও শিশু কেন্দ্রে মহিলা ডাক্তার চাই। তদন্তের পর শাহেলা বহাল থাকেন। এরপর শুরু হয় নতুন চক্রান্ত।
এদিকে এ সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসক ও নার্সদের মধ্যে বিরোধের কারণে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা বিঘিœত হচ্ছে। এ সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা প্রসূতিরা চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।