
শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় সংবাদ | বক্স্ নিউজ | রাজনীতি | শিরোনাম » ‘নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি বন্ধ করে জঙ্গিবাদ উত্থানের পথ করে দিচ্ছে সরকার
‘নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি বন্ধ করে জঙ্গিবাদ উত্থানের পথ করে দিচ্ছে সরকার
বিজয় নিউজ: নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার পথ রুদ্ধ করে সরকার জঙ্গিবাদের উত্থানের পথ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাগপা’র ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিযোগ করেন। খালেদা জিয়া বলেন, দেশজাতির এক গভীর সংকটকাল চলছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার নেই। বৈধ সংসদ নেই। তথাকথিত সংসদে কোনো কার্যকর বিরোধী দল নেই। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে সুশাসন নেই। সুবিচার নেই। রাষ্ট্রীয় প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আইনের শাসন নেই। নেই কোনো মানুষের নিরাপত্তা। সরকার কাউকে কোথাও কোনো নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তবুও দাবি করছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। যা কিছু ঘটছে তা সব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো স্বাভাবিকভাবে আইন অনুযায়ী তাদের কর্তব্য পালন করতে পারছে না। তাদেরকে রাখা হয়েছে শুধু গণবিচ্ছিন্ন ও অবৈধ সরকারকে জনগণের ক্ষোভ থেকে রক্ষা করার জন্য। তারা সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বিচার বহির্ভূতভাবে যাকে খুশি তাকে হত্যা করছে। জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে গুম ও খুন করে ফেলছে। যেখানে সেখানে খুনের শিকারদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের লাশের সন্ধানও মিলছে না। জুলুম, নির্যাতন, গ্রেফতার, হামলা, মামলা চলছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ছাড়া। গ্রেফতার ও নির্যাতনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে সম্মানিত নাগরিকদেরকেও নির্যাতন করা হচ্ছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা নেই। প্রতিদিন গড়ে ১৪ জন মানুষ খুন হচ্ছে। নারী ও শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত তিন মাসে পত্রিকার হিসাবে দেড় হাজার লোক খুন হয়ে গেছে। দুর্নীতি ও লুটপাট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। শেয়ার বাজার থেকে লক্ষ কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে নিঃস্ব করে ফেলা হয়েছে। ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভের আটশো কোটি টাকা ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। দফায় দফায় অবিশ্বাস্য রকমের ব্যয় বাড়িয়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো থেকে কোটি কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, গুপ্তহত্যা এবং অতর্কিতে হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ব্লগার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, বিদেশী নাগরিক, দূতাবাস কর্মী এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ ধরণের হামলা ও হত্যার শিকার হচ্ছে। তিনি বলেন, আতংকের ব্যাপার হচ্ছে, বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠির নামে এই সব হত্যার দায় স্বীকার করা হচ্ছে। এইসব ঘটনায় প্রতিটি নাগরিক আজ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত ও উদ্বিগ্ন। সরকার এসব হামলা ও হত্যার ঘটনা বন্ধ করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের উপস্থিতির কথা তারা অস্বীকার করছে। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে পারছে না। বরং তারা এর দায়-দায়িত্ব চাপাচ্ছে বিরোধী দলের উপর। এতে তদন্ত প্রভাবিত হচ্ছে এবং প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, আপনারা জানেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসন আমলে এদেশে প্রথম জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটেছিলো। সে সময়, রমনার বটমূলে বর্ষবরণ উৎসব, যশোরে উদীচীর সাংস্কৃতিক আয়োজন, ঢাকার পল্টনে সিপিবি’র জনসভায়, বানিয়াচংয়ের গির্জায়, খুলনায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে বোমা হামলার ঘটনায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছিলো। তখনও প্রকৃত সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের আড়াল করে আওয়ামী লীগ দায় চাপিয়েছে বিএনপি ও বিরোধী দলের উপর। তিনি বলেন, আমরা নির্বাচিত হয়ে সরকারে আসার পর, জঙ্গীবাদী তৎপরতাকে কঠোর হাতে দমন করেছিলাম। জঙ্গী নেতাদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা হয়েছিলো। তাদের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ অকার্যকর করে ফেলা সম্ভব হয়েছিলো। আজ আবার সেই জঙ্গীবাদের উত্থানের আলামত দেখে আমরা দেশবাসীর সঙ্গে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বর্তমান সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি ও আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে রুদ্ধ করে দিয়ে তারাই জঙ্গীবাদের উত্থানের পথ করে দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি। আমরা মানুষের নিরাপত্তা চাই। আমরা সকলের জন্য নির্বিঘœ জীবন চাই। আমরা মনে করি সেই নিরাপত্তা সরকারকেই দিতে হবে। বর্তমান সরকার বৈধ নয়। কিন্তু রাষ্ট্র ক্ষমতা তো তারা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। কাজেই নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তাদেরকেই পালন করতে হবে। তারা সেই দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে। তারা বলছে, সকলকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। এই কথা বলে, এইভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে কারো ক্ষমতায় থাকার অধিকার থাকে না।
তিনি বলেন, পাচার হওয়া টাকার কথা ধামাচাপা দিতে প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে রিমা-ে নিয়ে নির্যাতন করেছে। কারারুদ্ধ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকেও এই মামলায় জড়িয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে, তারা না-কি প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়েই এধরণের অভিযোগকে নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে মিথ্যা প্রচারণা, অত্যাচার, নানা ইস্যু সৃষ্টি করে তারা তাদের অপরাধগুলো ঢেকে রাখতে চায়। জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়। তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কোনো গণভিত্তি নেই। জনগণের মধ্যে তাদের কোনো সমর্থন নেই। তাই তারা অন্যের শক্তির উপর ভর করে দেশের মানুষকে পদানত করে রাখতে চায়। এভাবে বেশিদিন চলা যায় না। আমি মনে করি বর্তমান শাসকেরাও এইভাবে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। তাই তাদেরকে বলবো, দেশের মানুষের উপর নির্ভর করুন। দেশের অভ্যন্তরে যে সংকট সৃষ্টি করেছেন তা দেশের ভেতরেই আলাপ-আলোচনার পথে নিরসন করুন। সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। আর সময় ক্ষেপণের চেষ্টা করবেন না।