
বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অনিয়ম-দুর্নীতি | জাতীয় সংবাদ | বক্স্ নিউজ | শিরোনাম » দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত
দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত
বিজয় নিউজ:
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সাংবাদিকদের পেশাগত কাজে বাধা দূর করার আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সাংবাদিকরা। ‘দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা দুদকের প্রতি এ আহবান জানান। তারা বলেছেন, পেশাগত কাজে বাধা দিয়ে সাংবাদিকদের পুরষ্কৃত করলেই গণমাধ্যম দুর্নীতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি)র সেমিনারকক্ষে এ গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) এবং জার্মানির উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেড এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআইবি’র মহাপরিচালক মো. শাহ আলমগীর।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ তথ্য কমিশনের প্রধান তথ্য কমিশনার ড. গোলাম রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’ সম্পাদক শ্যামল দত্ত। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)র মহাপরিচালক ড. শামসুল আরেফিন। প্রধান বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. মফিজুর রহমান। বিভিন্ন গণমাধ্যমে পদস্থ সাংবাদিকরা এতে অংশ নেন।
ড. গোলাম রহমান বলেন, এখন সময় এসছে দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে কথা বলার। গণমাধ্যমকর্মীরা নিজেদের সমস্যা নিজেরাই বুঝতে পারছেন। তাদের পেশাগত সংকট রয়েছে। কিন্তু আর্থিক অনিশ্চয়তা দুর্নীতির জাস্টিফিকেশন হতে পারে না।
তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধের চেয়ে এর দুর্নীতির উৎসমুখ বন্ধে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। তথ্য অধিকার আইন দুর্নীতি বিরোধী সাংবাদিকতার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এ সুযোগ গণমাধ্যমকর্মীদের গ্রহণ করা উচিৎ।
অধ্যাপক মফিজুর রহমান মূল আলোচক হিসেবে আলোচনার সূত্রপাত করেন। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের শক্তি পুরোটা ব্যবহৃত হয় না। রি-অ্যাক্টিভ জার্নালিজমের পাশাপাশি প্রো-অ্যাক্টিভ ভূমিকাও গণমাধ্যমকে নিতে হবে। আমরা দেখি বড় বড় ঘটনার দিকেই সাংবাদিকদের ঝোঁক বেশি। দুর্নীতির সংবাদকে ‘ছোট সংবাদ’ মনে করা হয়।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘সত্যিকার দুর্নীতি বিরোধী ভূমিকা পালনে আমাদের গণমাধ্যম কতটা সক্ষম? যেখানে আমরা দেখি ক্ষমতার স্তম্ভের সঙ্গে গণমাধ্যমের এক ধরণের ঐক্য গড়ে উঠতে?’
দুর্নীতি বিরোধী সাংবাদিকতার জন্য একটি ম্যাপিং জরুরি বলেও মত দেন তিনি।
গোলটেবিল বৈঠকে দৈনিক প্রথম আলো’র যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, শক্তিশালী গণমাধ্যমের কথা বলা হলেও গণমাধ্যমকে শক্তিশালী দেখতে চায় কি না-এ প্রশ্ন আগে চলে আসে। আমরা এমন একটি সময় দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে আলোচনা করছি যখন দুদকেই গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাহলে দুদককি গণমাধ্যমকে প্রতিপক্ষ মনে করে?
তিনি গণমাধ্যমকে দুদকের সহযোগি ভাবার আহ্বান জানান।
বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজ’র এডিটর প্রণব সাহা বলেন, দুদকেও দুর্নীতি-অনিয়ম হয়। তাই সেখানে সাংবাদিক প্রবেশ করতে না দেয়া-এক হিসেবে ঠিকই আছে।
তিনি বলেন, সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্নীতি বিরোধী ১০টি আইন করেছে। ৬টি প্রতিষ্ঠান আইনগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ জায়গায় কাজ করলে দুদকের কাজ অনেকাংশে কমে যেত।
তিনি বলেন, সরকার যে শুদ্ধাচার কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে সেটি এখনো একটি প্রকল্প হিসেবে আমলাতন্ত্রে বন্দী।
দুদক মহাপরিচালক ড. শামসুল আরেফিন বলেন, দুদকে গণমাধ্যমকর্মী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। কাজের সুবিধার্থে শৃঙ্খলা আনয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করতে প্রতিমাসে নিয়মিত ব্রিফিং হচ্ছে।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিকরা বলেন, বহিরাগতদের জন্য জারি হওয়া ২০১২ সালের একটি নোটিশের উপর সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী।
তারা বলেছেন, গণমাধ্যমকে সত্যিকার দুর্নীতি বিরোধী ভূমিকার জায়গায় উন্নীত করতে হলে গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরির নিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসহ পেশাগত সংকট দূরা করা প্রয়োজন। এটি শুধুমাত্র ফেলোশিপ দিয়ে, পুরষ্কৃত প্রদান করে সম্ভব নয়।
গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনায় সাজ্জাদ আলম খান তপু, শাহনাজ মুন্নী, রূহুল আমিন রুশদ, ফারজানা রূপা, সুলতানা রহমান, আনোয়ার হক, রাজু আহমেদ, বদরুদ্দোজা বাবুসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন সাংবাদিকরা অংশ নেন।