
রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » আইন- আদালত | বরিশাল | শিরোনাম » স্বরূপকাঠিতে পলাশ হত্যায় চেয়ারম্যান সহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
স্বরূপকাঠিতে পলাশ হত্যায় চেয়ারম্যান সহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বিজয় নিউজ: পিরোজপুর প্রতিনিধি:
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে জসিম উদ্দিন পলাশ (৩৫) হত্যার ঘটনায় নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান আশীষ বড়ালসহ ২৩ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। শনিবার রাতে নিহত পলাশের ভাই আলাউদ্দিন হাওলাদার শিমুল বাদী হয়ে নেছারাবাদ থানায় ওই মামলা দায়ের করেন। ৩০২/ ২০১/৩৪ ধারায় ওই মামলা রেকর্ড করা হয়। ঘটনার পর পর আটক রতন বৈদ্য, স্বদেশ বড়াল ও লিটন শীলকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরন করা হয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মো.ওয়ালিদ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে। রবিবার সকালে পূর্ব জলাবাড়ী এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায় সকল মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। একজন নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মাথায় ও শরীরে রড ঢুকিয়ে হাতপা ভেঙ্গে ইতিহাসের জঘন্যতম একটি হত্যাকান্ড গোটা স্বরূপকাঠি বাসীকে অবাক করে দিয়েছে। ঘটনার পর থেকে অধিকাংশ পুরুষ এলাকা ছাড়া। যাদের সাথে কথা হয়েছে তারাও আতংকে মুখ খুলতে নারাজ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আশীষ বড়ালের হাতে এক নির্যাতিত একজন জানান ছাত্র জীবন থেকেই আশীষ বড়াল উশৃংখল। কৌশল করে বিয়ে করেন সরকারী স্বরূপকাঠি কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শ্যাম লাল মিস্ত্রীর কন্যা লিপী রানী মিস্ত্রী মিঠুকে। একটি ছেলেও রয়েছে তাদের। সেই স্ত্রী সন্তানদের খোজ খবর রাখেন না তিনি। তার চাহিদা পুরনে ব্যার্থ হওয়া শশুর পরিবারের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তার একমাত্র শ্যালক বিপ্লব মিস্ত্রী ওরফে বাপ্পি ও তার মা ভীত সন্ত্রস্ত জীবনযাপন করছেন। একপর্যায়ে আশিষ নিজের নাম পরিচয় পাল্টিয়ে এক মুসলিম মেয়েকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তার তৃতীয় স্ত্রী নিয়ে তিনি ঘর সংসার করছেন। আশীষ আওয়ামী পরিবারের লোক হয়েও ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জলাবাড়ী ও সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ছিলেন। তখন থেকে এলাকায় বনে যান দাদা বাবু নামে। একই সময় সর্বহারা পরিমল বাহিনীর তৎপরতা শুরু হলে আশীস বাহিনী কোনঠাসা হয়ে পড়েন। পরবর্তিতে তৎকালীন হুইপ সৈয়দ শহীদুল হক জামালের হস্তক্ষেপে দুই গ্রুপ ওই এলাকাতেই সহঅবস্থান করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এমনকি ওইসময় হুইপ শহীদুর হক জামালের সঙ্গে তার গাড়ী ও স্পীডবোটেও চলতে দেখা গেছে আশীসকে। ২০০৩ সালে আশীস ও পরিমল বাহিনীর নানা অপকর্মের কাহিনী বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে গা ঘা ঢাকা দেন আশীস বড়াল। এক পর্যাযে পরিমল বাহিনী প্রধান পরিমল সিকদার পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। এরপর থেকে আশীষ বড়াল অনেকটা এলাকা ছাড়া ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবারো আওয়ামী লীগার সেজে এলাকায় অসা যাওয়া করতে থাকে সে। ২০১৩ সালে পিরোজপুর-২ সংসদীয় আসন স্বরূপকাঠি পিরোজপুর-১ আসনে সংযুক্ত হওয়ার পর এক ইফতার পার্টিতে আশীষ উপস্থিত হলে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম মুইদুল ইসলামের লোকজনের দ্বারা আক্রমনের শিকার হন তিনি। তারপর থেকেই কৌশলে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে পৌছানোর সুযোগ করে নেন তিনি। দলীয় কোন পদপদবী না থাকলেও এবারের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পান তিনি। এরপূর্বে ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেন ইউপি সদস্য পরিমল বৈদ্য। সেময় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষাবলম্বনকারী আশীষ বড়াল তার বাহিনী নিয়ে পরিমল বৈদ্যর ওপর হামলা করে তার পা গুড়িয়ে পঙ্গু করে দেয়। এসময় ভবেন হালদারসহ বিভিন্ন জনের বাড়ীতে হামলা করে আশীষ বাহিনী। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনের সময় আরামকাঠি এলাকায় তার প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন আশীষ। এ ঘটনার রেশ ধরে তার বাহিনী এলাকায় বিভিন্ন বাড়ী ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটসহ বিভিন্ন জনকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার আশিষের নেতৃত্বে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী পলাশকে নির্মমভাবে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পলাশ হত্যার ঘটনায় আশিষ বড়ালকে প্রধান আসামী করে মামলা হওয়ার পর থেকে আশীষের মোবাইল ফোন থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।