
রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » ক্রাইম রির্পোট | বক্স্ নিউজ | বরিশাল | শিরোনাম » ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, না দেয়ায় দুই মাসের শিশুকন্যাকে জিম্মি করে মাকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ
৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি, না দেয়ায় দুই মাসের শিশুকন্যাকে জিম্মি করে মাকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ
বিজয়নিউজ: খালিদ আবু পিরোজপুর :‘ওরা আমার দুই মাস বয়সী দুধের সন্তানটাকে জিম্মি করে দুইদিন আটকে রেখে আমার উপর পাশবিক অত্যাচার করেছে। হাতে ধরেছি, পায়ে ধরে বলেছি- আমার পেটে সিজারের ঘা এখনও শুকায়নি, আমি খুবই অসুস্থ আমাকে ছেড়ে দিন, কিন্তু আমাকে ওরা ছাড়েনি, জুয়েল ও তার দুই বন্ধু পর্যায়েক্রমে আমার উপর অত্যাচার চালায়, ওরা আমার মেয়েকে খাটের উপর আচার মারে, তখন ও চিৎকার দিয়ে কাঁদছিল এসময় পাষন্ডরা ওর মুখ চেপে ধরে নির্যাতন করে, শুধু তাই নয় দুইদিনে ওরা আমাকে শুধু পানি খাইয়ে রেখেছে। আমার বাবা মামলা করায় স্বপরিবারে হত্যার হুমকি দিলে আমি পিরোজপুরের এক আত্মীয়ের বাড়ি আব্বাকে নিয়ে পালিয়ে এসেছি।’
ধর্ষক ও অপহরণকারীর বিরুদ্ধে মামলা করে প্রাণভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে পিরোজপুরের দুর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার উত্তর কাঁঠালতলী গ্রামের এক গৃহবধূ (২০)। গত এক সপ্তাহ ধরে ২ মাসের শিশু কন্যাকে নিয়ে এ গৃহবধূ গ্রাম ছেড়ে পিরোজপুর শরতলীর এক নিকট আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। রোববার সকালে পিরোজপুর প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে কেঁদে কেঁদে তার উপর পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতিত গৃহবধূ অভিযোগ করেন, তিনি গত ৫ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে শিশু কণ্যা ও নিজের চিকিৎসার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় বাজারের এক চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পথিমধ্যে উপজেলার কাঠালতলী নলী বেইলী ব্রীজের কাছে পৌঁছলে এলাকার সন্ত্রাসী, নেশাখোর জুয়েল, নজরুল, ইব্রাহীম, রাসেল, তারেক, অপুর্ব, স্বপন, আল আমিনসহ আরো কয়েকজন জোর করে তাকে টেনে হিচড়ে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ, মুখ, হাত বেঁধে কোলের শিশু সন্তানকে ছিনিয়ে নেয়। এরপর পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার কোন গ্রামের একটি বাড়িতে আটকে রাখে। এসময় তিনি খুবই অসুস্থ ছিল। পরে সন্ত্রাসী জুয়েল মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গৃহবধূর বাবা ও তার স্বামীকে ফোন করে মৃত্যু ভয় দেখিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। কিন্তু টাকা না দেয়ায় তার উপর সন্ত্রাসীরা পাশবিক অত্যাচার চালায়।
গৃহবধূর বাবা ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে জানালে তিনি তাৎক্ষনিক লোকজন নিয়ে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে পরের দিন দুপুর ১২টার দিকে আসামীরা একটি মাহেন্দ্র গাড়ীতে অপহৃতা ও তার শিশু কণ্যাকে নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনার পর ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে অপহরণকারী জুয়েলসহ তার সহযোগি ১০/১১ জনের নামে পাথরঘাটা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ প্রধান আসামী জুয়েলকে গ্রেফতার করতে না পারলেও অপর দুই আসামী অপুর্ব ও রাসেলকে গ্রেফতার করেছে।
গৃহবধূর বাবা জানান, অভিযুক্ত ধর্ষক ও অপহরণকারীরা তাকে মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এমনকি মামলা তুলে না নিলে তাদেরকে স্বপরিবারে হত্যা করা হবে। অপরদিকে আসামীরা বীরদর্পে এলাকায় ঘুরে বড়োচ্ছে।
এ ব্যাপারে পাথরঘাটার কাঁঠালতলী গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মুঠো ফোনে জানান, আসামী জুয়েলসহ তার সঙ্গীরা এলাকায় মদ, গাজা ব্যবসাসহ এহেন কোন সন্ত্রাসী কাজ নেই যা তারা না করে। তাদের অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষ সর্বদা উৎকণ্ঠায় থাকে।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: জিয়াউল আহসান জানান, এ ব্যাপারে থানায় ১০ জনের নামউল্লেখ করে অপহরণ ও নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই রাসেল ও অপুর্ব নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
পাথরঘাটা থানার মামলা সুত্রে জানাযায়, দুই বছর আগে গ্রামের স্কুলে দশম শ্রেনিতে পড়ার সময় একই গ্রামের সন্ত্রাসী, নেশাখোর জুয়েল এ মেয়েটিকে জোড় করে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু ভিকটিমের পরিবার রাজি না হয়ে তাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসী জুয়েল সুযোগ খুঁজতে থাকে। সন্তান সম্ভবা মেয়েটি বাড়িতে আসার খবর পেয়ে জুয়েল তার দলবল নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং সুযোগ খুঁজতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে ভিকটিমকে অপহরণ এবং শিশু সন্তান জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি এবং পাশবিক নির্যাতন করা হয়।