
বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
প্রথম পাতা » জাতীয় সংবাদ | ঢাকা | নির্বাচন | রাজনীতি | শিরোনাম » গোপালগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা
গোপালগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা
নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ : নির্বাচন কমিশন ঘোষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২৭ ডিসেম্বর নির্ধারন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে গোপালগঞ্জ-১ আসন মুকুসুদপুর-কাশিয়ানী উপজেলার ভোটারসহ সকল স্তরের মানুষের জানার আগ্রহ ততই বাড়ছে, এবার গোপালাগঞ্জ-১ আসনে কে পাচ্ছেন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন। অনেকের ধারনা হয়তো ডজন খানেক নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন। এদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে আছেন বর্তমান সাংসদ আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। এ ছাড়াও রয়েছেন দলের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মুকুল বোস এবং ব্যারিষ্টার আলী আসিফ খান।
বর্তমান সংসদ আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। এবারেও এ আসনের দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। পরপর চারবার এ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে অতি সহজে জয়ের মালা পরা সম্ভব বিধায় অনেকেরই গোপালগঞ্জ-১ আসনের প্রতি আকর্ষন একটু বেশী। তাই পঞ্চমবারের মতো আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন এবং আপ্রান চেষ্টা করবেন তা ধরেই নেয়া যায়। ঢাকার একটি আসনে তাঁকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলে লোকমুখে এমন গুঞ্জন বেশ কিছু দিন যাবত শোনা যাচ্ছে। সে গুঞ্জন কত টুকু সঠিক তা এই মূহুর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে কয়েক দিন পুর্বে সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের বাড়িতে আহুত দলের এক বর্ধিত সভায় বক্তব্য প্রদানকালে ইংগিতে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানাকে যদি দল থেকে এ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয় সে ক্ষেত্রে তিনি সে নির্বাচনে মূখ্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী। তবে শেখ রেহানা নির্বাচনে আসবেন কিনা বক্তব্যে তিনি তা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের এমন বক্তব্যের কারনে দলের মনোনয়ন নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ধু¤্রজাল সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। বিগত নির্বাচন গুলিতে যেমন অনেক দিন আগেই সাধারণ মানুষ অনুমান করতে পারতো কে আসছেন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে কিন্তু আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেনা এ আসনে কে পাচ্ছেন আওয়ামীলীগের মনোনয়ন।
আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মুকুল বোস আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি যে দলের একজন পোড় খাওয়া নেতা তা শিকার করতেই হবে। বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামালের ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন মুকুল বোস। জাতির জনকের শাহাদতের পরে প্রতিবাদ করতে গিয়ে দীর্ঘ দিন কারা নির্যাতন ভোগ করেছেন। ছাত্র নেতা হিসেবে সারা দেশে তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল। পরবর্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদক থাকা কালিন সময়ে নিজ এলাকা মুকসুদপুর কাশিয়ানীর মানুষের জন্য কিছু করার প্রতি তিনি ছিলেন বেশ আন্তরিক এবং বর্তমানেও বিপুল সংখ্যক মানুষ তার কাছে গিয়ে তার সহযোগিতা পেয়ে থাকেন। এসব বিবিধ কারনে এ এলাকার মানুষের কাছে তিনি যেমন সুপরিচিত তেমনি জনপ্রিয়। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মৃত্যুর পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বয়োজ্যেষ্ঠ্য আওয়ামীলীগ নেতা হিসাবেও তিনি ইতিমধ্যে নিজেকে নির্ভরযোগ্য করে তুলেছেন বলে অনেকের ধারনা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতাসহ বেশ কয়েক বছর যাবত নিজ এলাকার মানুষের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এবং গনসংযোগ করে নিজের অবস্থানকে শক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন। আওয়ামীলীগের পোড় খাওয়া নেতা কর্মী যারা দীর্ঘ দিন অবহেলিত অবস্থায় থেকে নিরাশায় দিন কাটাচ্ছিলেন ছিলেন তারাও ইতিমধ্যে সংগঠিত হয়ে তার পাশে এসে সমবেত হয়েছে বলে প্রমান পাওয়া যাচ্ছে। তার রাজনৈতিক জীবন বিবেচনা করে দল তাকে মনোনয়ন দিবে এমন প্রত্যাশা করছেন তার সমর্থকরা।
ব্যারিষ্টার আলী আসিফ খান বয়সে তরুণ, মেধাবী এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মীয়। দলের নবীন এই নেতা আত্মীয়তার সূত্র ধরে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশা করতেই পারেন। তবে দলের জাতীয় কমিটির কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত করে কতদুর অগ্রসর হয়েছেন অল্প কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো তা জানা যাবে। নির্বাচনী এলাকায় এসে সাংগঠনিক কোন কর্মকান্ডে যোগ দিতে দেখা না গেলেও জাতীয় ও দলীয় বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক রঙ্গীন পোষ্টার লাগিয়ে সাধারণ মানুষের আলোচনায় এসেছেন। সংগঠনের স্থানীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততার কোন লক্ষন এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। এ আসনটি যেহেতু আওয়ামীলীগের একটি শক্ত ঘাটি সেহেতু যিনিই দলীয় মনোনয়ন পাবেন তার জন্যই দলীয় নেতা কর্মীরা মাঠে নামবেন এবং ভোটাররা নৌকা প্রতীকেই সীল মারবেন এটা নিশ্চিত ধরে নেয়া যায়। ব্যারিষ্টার আলী আসিফ খান হয়তো সে আশাতেই তৃণমূলের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষনের বেশি চেষ্টা করছেন। তবে কত টুকু সফল হবেন তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
বর্তমান সংসদ আওয়ামীলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের অতি ঘনিষ্টজনের ধারনা আলোচনা সমালোচনা যাই হোক অবশেষে দলীয় মনোনয়ন ফারুক খানই পাবেন। কারন দলের হাই কমান্ডের সঙ্গে তার যেমন সুসম্পর্ক রয়েছে তেমনি অন্যদের তুলনায় ফারুক খানের আর্থিক সঙ্গতিও অনেক বেশী। অপরদিকে মুকুল বোসের প্রতি যাদের সমর্থন রয়েছে তাদের ধারনা রটিত গুঞ্জন সঠিক হলে মুকুল বোসই আগামীতে এ আসনে মনোনয়ন পাবেন কারন হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তার যেমন প্রভাব রয়েছে তেমনি ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত তিনি বঞ্চিত থাকায় তৃণমূল থেকে উঠে আসা মুকুল বোসকে দল এ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়ে তার মূল্যায়ন করবে। আবার অনেকের ধারনা আত্মীয়তার সূত্র ধরে ব্যারিষ্টার আলী আসিফ খান হয়তো অনেকটা এগিয়ে গেছেন। মুকসুদপুর-কাশিয়ানীর ২৪টি ইউনিয়নের মানুষ এ আসনের মনোনয়ন নিয়ে চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন আড্ডাখানায় যতই আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলুক না কেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। সার্বিক বিবেচনা করে তিনি যাকে মনোনয়ন দিবেন তিনিই গলায় পরবেন গোপালগঞ্জ-১ আসনের জয়ের মালা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মভূমি গোপালগঞ্জের নির্বাচনী আসনের সব কটির ন্যায় এ আসনেও সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই বিপুল ভোটে বার বার বিজয়ী হয়ে আসছেন। আওয়ামীলীগের এ ঘাঁটিতে অন্যান্য দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা মাত্র। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কমবেশী তৎপরতা থাকলেও অন্যান্য ছোট ছোট দলগুলোর তৎপরতা তেমন চোখে পড়ার মতো নয়। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের তৎপরতা একে বারেই নেই।
১৯৯৬ সালের জুন থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তিনি বানিজ্য এবং বে-সামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় বেশ উন্নয়ন মূলক কাজ করেছেন। দলের নেতা-কর্মী ও এলাকার ভোটারদের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে। প্রায়ই এলাকায় আসেন এবং বিভিন্ন জনহিতকর কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। সাধারন মানুষ তাকে ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবেই জানেন বলে নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়। তবে গত উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন এবং দলের বিভিন্ন কমিটি গঠনসহ নানান কারণে ফারুক খানের ক্লিন ইমেজে কিছুটা ছেদ পড়েছে। অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগের মধ্যে। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের কেউ কেউ নিজেদের রাজনীতি থেকে গুটিয়ে রেখেছেন। বিষয় গুলো ইতিমধ্যে দলের নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টিতেও এসেছে বলে ক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নে আওয়ামীলীগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা নতুন চমক হয়ে আসতে পারে বলে লোকমুখে গুঞ্জন রয়েছে।
অন্যদিকে, নেতাকর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এ আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে বর্তমান এমপি লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান ঢাকার একটি আসনের প্রার্থী হতে পারেন। তবে সুনির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা এ আসনে নির্বাচন করলে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মুকুল বোস। সংস্কারবাদী নেতা নেতা হওয়ার কারনে দীর্ঘ সময় রাজনীতির বাইরে ছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি আবার রাজনীতিতে সরব হয়ে উঠেছেন। দলীয় পদ বঞ্চিত, ইউপি নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত ও পরাজিত প্রার্থীরাসহ দলের একটি অংশ তার সঙ্গে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়াও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি এ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও এ আসনের সাবেক সাংসদ মরহুম কাজী আব্দুর রশীদের বড় ছেলে কাজী হারুন অর রশীদ মিরন, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের দৌহিত্র ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান, জেলা ছাত্রলীগের আশির দশকের মাঠ দাপানো নেতা বর্তমানে আওয়ামীলীগ যুক্তরাষ্ট্র শাখার সদস হিন্দোল কাদির বাপ্পা, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক আরিফা রহমান রুমা, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দিপু ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সম্পাদক কে এম মাসুদুর রহমান মাসুদ দলের কাছে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
সাবেক মন্ত্রী লে. কর্ণেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান জানান, এ আসনে চারবারের এমপি তিনি। সব সময়ই তিনি নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নে কাজ করেছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি এ আসনে দলের মনোনয়ন চাইবেন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি যথেষ্ট আশাবাদী।
মুকুল বোস দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিশ্চয়ই আগামী নির্বাচনে আমার মত ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করবেন।
অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল জানান, ভোটারদের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। দলের জন্যও তার অনেক ত্যাগ রয়েছে। তাই তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন।
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন চাইবেন বলে প্রত্যাশার কথা জানান।
কাজী হারুন অর রশীদ মিরন জানান, এ আসনে কোনো উন্নয়ন হয়নি। দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা বঞ্চিত হয়েছেন। এ অবস্থায় তিনবারের এমপি কাজী আবদুর রশীদের ছেলে হিসেবে মনোনয়ন দিলে তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন।
হিন্দোল কাদির বাপ্পা বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে জেল জুলুমসহ নানান অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। দলের দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে জিয়া ও এরশাদের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। বর্তমানে আমেরিকায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করছেন। এসব বিবেচনা করে এ আসনে তিনি দলীয় মনোনয়রন পাবেন বলে তিনি আশাবাদী।
আরিফা রহমান রুমা জানান, সংসদে আইন প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণের জন্য শিক্ষিত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়া উচিত। তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন।
শেখ আতিয়ার রহমান দিপু জানান, গত ২০ বছর তিনি এ আসনের মানুষের সঙ্গে রয়েছেন। ভোটারদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ রয়েছে। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী এই নেতা।
কে এম মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, দলের প্রার্থিতার জন্য তিনি গত ১০ বছর রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করছেন। এলাকাবাসীর কাছ থেকেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন প্রতিটি নির্বাচনে। এ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল। দলের নেতাকর্মীরা প্রায় সময়ই নিষ্ক্রিয় থাকেন। তা ছাড়া অতীতে কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সামান্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি। তবুও আগামী নির্বাচন নিয়ে চলছে তাদের নানা পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি। গণসংযোগ, সদস্য সংগ্রহসহ নানা কার্যক্রম। বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনেকেই আগ্রহী।
আগামী নির্বাচনে তাই শক্ত প্রতিদ্বন্দিতার জন্য দলীয় মনোনয়নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ীও গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর, দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও কেন্দ্রীয় সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জায়নুল আবেদীন মেজবাহ। জেলার সাবেক সভাপতি এফ ই শরফুজ্জামান জাহাঙ্গীর জানান, ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি এ আসনে দলীয় কার্যক্রম দেখাশোনা করছেন। তিনি ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি গোপালগঞ্জ-২ আসন থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এখানকার মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সেলিমুজ্জামান সেলিম জানান, তিনি ছাড়া দলের কোনো নেতা সাংগঠনিক কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন না। তিনি সব সময়ই নেতাকর্মীদের পাশে রয়েছেন। নবম সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলীয় নেতারা তাকে এ আসনে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচন করবেন।
সৈয়দ জায়নুল আবেদীন মেজবাহ জানান, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তিনি সব সময়ই নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছেন। তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে এ আসনে বিএনপি সম্মানজনক ভোট পাবে বলে তার বিশ্বাস।
জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী দীপা মজুমদার জানান, তিনি এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেয়ে দশম সংসদে প্রতিদ্বন্দিতা করেছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
এছাড়া কাশিয়ানী উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান শেখ মুন্নু, জাতীয় কৃষক পার্টিও সহ-সভাপতি রীতা মজুমদার, মুকসুদপুর উপজেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি আজম শরীফ ও ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
মুকসুদপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, ১৬টি ইউনিয়ন ও কাশিয়ানী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গোপালগঞ্জ-১ আসন। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১০ হাজার ৩৩৫। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৮২ জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩ জন।
গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, গোপালগঞ্জের মানুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী ও নৌকার সমর্থক। আগামী সংসদ নির্বাচনেও দলের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন এবং শেখ হাসিনার নেত্রীত্বে পুনরায় সরকার গঠন করে হ্যাট্রিক করবে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চায় ৭০ বছরের বৃদ্ধা কানন বিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় স্বামীর কাছে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে চায় ৭০ বছরের এক বৃদ্ধা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পূর্বাপাড়া গ্রামের মৃত যতিন বিশ্বাসের মেয়ে কানন বিশ্বাস (৭০), বটবাড়ী গ্রামের মৃত দেবেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণকান্ত মন্ডল (৭৭) সাথে ১৯৬৯ সালে হিন্দু সামাজিক বিধি মোতাবেক বিবাহ হয়। কৃষ্ণকান্ত মন্ডলের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং-৪৭৮০, তাং- ২১/০৫/২০০৫ইং, সাময়িক সনদ নং- ১৮৭৫৩৯, প্র: ৩/০৭/২০০২/৫৫১৭, সিরিয়াল নং- ১৪০৪। উক্ত বিবাহের পুরোহীত ছিলেন পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত বিশেশ্বর মুখার্জির ছেলে মৃত কার্তিক মুখার্জি এবং শীলের দায়িত্ব পালন করেন মৃত হরকুমার শীলের ছেলে মৃত হরি শীল। বিয়ের পর ৬/৭ বছরের সংসার জীবনে তাদের ঘরে দুটি সন্তান জন্মগ্রহন করে। ছেলেটি অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় এবং মেয়েটি স্বামীর নির্যাতনে মায়ের কোল থেকে পড়ে মারা যায়। তারপর যৌতুক লোভি স্বামী মারপিট করে স্ত্রীকে বাবার বাড়ী পাঠিয়ে দেয়। অদ্যবধি কানন বিশ্বাস বাবার বাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামে অবস্থান করে আসছেন। শুধু মাত্র হিন্দু ধর্মীয় সামাজিক প্রয়োজনে স্ত্রীকে বাড়ী নেয়া হয়। স্বামী কৃষ্ণ কান্ত মন্ডল ২য় বিবাহ করে ঘর সংসার বাঁধেন। কিন্তু আজও শাখা সিঁদুর গায়ে নিয়ে স্বামীর কাছে স্ত্রীর মার্যাদা পাবার অপেক্ষায় দিন গুনছেন এবং ভাইয়ের সংসারে খেয়ে না খেয়ে রোগে সোগে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বৃদ্ধা কানন বিশ্বাস। আমতলী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বিদ্যাধর বিশ্বাস এবং রাধাগঞ্জ ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার সদানন্দ গাংগুলি সহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি সামাজিক ভাবে সালিশ বৈঠকের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু কৃষ্ণকান্ত মন্ডল তা গ্রাহ্য করেননি।
এ বিষয়ে কথা বলতে এলাকায় গেলে বৃদ্ধা কানন বিশ্বাস কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, মৃত্যুকালে আমি শুধু আমার মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর অধিকার নিয়ে মরতে চাই। এ ব্যাপারে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে পার্শ্বনাথ বিশ্বাস(৭৫), সর্বরানী বিশ্বাস (৭২) গোলাপ ভাবুক (৮৫), জগদিশ ঠাকুর (৭২), মুক্তিযোদ্ধা হরকান্ত বিশ্বাস, আমতলী ইউপি ৪নং ওয়ার্ড সদস্য বিভাষ বিশ্বাস, সঞ্জয় বিশ্বাস, অখিল হালদারসহ শতাধিক এলাকাবাসী আক্ষেপ করে বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও কৃষ্ণকান্ত মন্ডলের এ কেমন আচরন তা আমরা ভেবে পাচ্ছি না, তার মত একজন মানুষ কি ভাবে এহেন অমানবিক কাজ করতে পারে এটাই আমাদের প্রশ্ন? এ বিষয় অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণ কান্ত মন্ডলের ০১৯৩০৬১০০৮২ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে কথা বলতে চাইলে বিভিন্ন তালবাহানায় তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ বিষয়ে স্বামীর অধিকার পেতে বৃদ্ধা কানন বিশ্বাস বাদী হয়ে গত ১৯/০৮/২০১৮ইং তারিখে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
গোপালগঞ্জে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ উপলক্ষে শোভাযাত্রা
নিজস্ব প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহ উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও ওজোপাডিকো যৌথ ভাবে এ কর্মসূচী পালন করে। “শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” এ শ্লোগানকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়।
পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বক্তব্য রাখেন। এ সময় ওজোপাডিকোর গোপালগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন অর রশিদ, সিবিএর সাধারণ সম্পাদক ওলিউজ্জামান মিন্টু, পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেনসহ বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ও বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
বক্তারা নিজ নিজ বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।