দুর্নীতি বন্ধে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের সুপারিশ দুদকের

মশাহিদ আহমদ, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলাধীন শরিফপুর ইউনিয়নস্থিত তেলিবিল এহ ইয়া উল উলুম মাদ্রাসা নিয়ে চলছে মুহতামিম মাওলানা লিয়াকত হোসেন ও মকদ্দুছ মেম্বারের অনিয়ম-দূর্ণীতি-স্বেচ্ছাচারিতার রামরাজত্ব। এ মাদ্রাসার অন্তর্ভূক্ত রয়েছে ‘নমৌজা এহ ইয়া উল উলুম এতিমখানা’ ও ‘তেলিবিল নুরানী কিন্ডার গার্ডেন মাদ্রাসা’ নামে আরও দু’টি সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। মাদ্রাসাসহ এ তিনটি প্রতিষ্ঠানেরই সর্বময় হর্তকর্তা হচ্ছেন মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা লিয়াকত হোসেন ও মকদ্দুছ মেম্বার। মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক কাম হিসাবরক্ষক মাওলানা মোঃ ইছহাক প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী-২০১৬ সাল পর্যন্ত তেলিবিল এহ ইয়া উল উলুম মাদ্রাসায় রয়েছেন ১১ জন শিক্ষক, ৩ জন শিক্ষিকা, সব শ্রেণী মিলিয়ে ১শ ৩০ জন ছাত্র ও ১শ ২০ জন ছাত্রী। এর মধ্যে এতিম ছাত্র রয়েছে ১৪ জন। তবে, ওই ১৪ জন এতিম ছাত্র মাদ্রাসার অন্তর্ভূক্ত নমৌজা এহ ইয়া উল উলুম এতিমখানার এতিম কি-না তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। অবশ্য, তিনি তেলিবিল নুরানী কিন্ডার গার্ডেন মাদ্রাসায় কোন ছাত্রছাত্রী নেই বলে নিশ্চিত করেন। এরপর অর্থাৎ ২০১৬ সালের পর থেকে অদ্যাবধি এ মাদ্রাসায় কোন ছাত্রছাত্রী ভর্ত্তি করা হয়নি। মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা লিয়াকত হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ- দীর্ঘদিন যাবৎ ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে সংগৃহীত সরকারী-বেসরকারী অনুদানের অর্থ নামমাত্র মাদ্রাসার জন্য ব্যয় করে বাকী অর্থ মকদ্দুছ মেম্বারসহ তিনি ভোগ করছেন। মাদ্রাসার মুহতামিমের দায়িত্ব পালণ বাদ দিয়ে তিনি ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারী-বেসরকারী অনুদান সংগ্রহেই ব্যস্ত থাকেন সারাবছর। সারাবছরে ২/৪ দিন মাদ্রাসায় এসে হাজিরা বইসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেই মুহতামিমের দায়িত্ব সম্পন্ন করেন তিনি। মাদ্রাসার একটি নামমাত্র ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও, তিনি বছরে ২/৪ দিন ডেকে এনে রেজুলেশন খাতাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া ছাড়া অন্য কোন কাজেই ওই কমিটির কাউকেই সম্পৃক্ত করেননা। উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে সাইনবোর্ড সর্বস্ব নমৌজা এহ ইয়া উল উলুম এতিমখানার নামে প্রতি ৬ মাস পর পর ৮৪ হাজার টাকা প্রদান করা হলেও, সেই টাকা এতিমদের জন্য কোন খাতে কিভাবে কত ব্যয় করা হয় এর কোন হিসাব নেই। মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটি এমনকি মাদ্রাসার হিসাবরক্ষকও ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় এবং কোন কার্যক্রমের কোন তথ্য জানাতে পারেননি। তিনি বলেন- এসব জানেন একমাত্র মুহতামিম সাহেব। এককথায়- ওই তিনটি প্রতিষ্ঠানে চলছে মাদ্রাসার মুহতামিম ও মকদ্দুছ মেম্বারের হরিলুট ও রামরাজত্ব। অভিযোগ রয়েছে, এসব অনিয়ম-দূর্ণীতি-স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদী হবার কারণে মুহতামিম মাওলানা লিয়াকত হোসেন একক সিদ্ধান্তে ৩ জন শিক্ষককে চাকুরীচ্যুত করেন। এছাড়া, মুহতামিমের অনিয়ম-দূর্ণীতি-স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন আরও ৩/৪ জন শিক্ষক। একই কারণে সর্বশেষ ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সম্পাদক আব্দুস সালাম মাষ্টার। এরপর থেকে অদ্যাবধি শুন্য রয়েছে মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সম্পাদকের পদ। শোনা গেছে- চাকুরীচ্যুত ও পদত্যাগকারী শিক্ষককরা নাকি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা লিয়াকত হোসেনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও প্রায় ২০ বছর যাবৎ মাদ্রাসার এতিমদের টাকা আতœসাৎ এর অভিযোগ তুলেছিলেন। মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির কয়েকজন সদস্যও নাকি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা লিয়াকত হোসেনের বিরুদ্ধে ‘মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটিকে না জানিয়ে নিজেই একক সিদ্ধান্তে মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করার’ অভিযোগ তুলেছিলেন। মাদ্রাসার অডিট কমিটি হিসাব নিকাশে বেশ কিছু সমস্যা’ এবং ‘এসব সমস্যা ধামাচাপা দিতে তিনি তার ভাতিজাসহ আতœীয় স্বজনদেরকে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ করার’ অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুতি ও পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কৌশলে ওই শিক্ষকদেরকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন’। তবে, শোনা অভিযোগগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ, মুহতামিম লিয়াকত হোসেনের অনিয়ম-দূর্ণীতি-স্বেচ্ছাচারিতায় অতীষ্ট হয়ে স্থানীয় পূর্বভাগ ও চানপুর গ্রামবাসী এবং ওই দু’টি গ্রামের প্রবাসী লোকজন ‘মুহতামিম পদত্যাগ না করা পর্যন্ত’ মাদ্রাসায় সকল প্রকার চাদা ও অনুদান প্রদান স্থগিত রেখেছেন বলে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
মৌলভীবাজারে পাউবো’র বাধে গরু চড়াতে যাবার অপরাধে শিশুকে পিটিয়ে আহত