
রবিবার, ৩ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » বক্স্ নিউজ | সিলেট » জকিগঞ্জ থেকে নিখোঁজ শিশু ৩ বছর পর পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার
জকিগঞ্জ থেকে নিখোঁজ শিশু ৩ বছর পর পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার
বিজয় নিউজ: জকিগঞ্জ(সিলেট) প্রতিনিধি::
বাবার হাত ধরে বাড়ীর পাশে বাজারে গিয়েছিল ৯ বছরের শিশু জুবেল আহমদ। হঠাৎ অসাবধানতার কারণে বাবার হাত ফসকে হারিয়ে যায় জুবেল। নিখোঁজের ঘটনায় জুবেলের বাবা থানায় একটি জিডি করেন। তার পর থেকেই সে নিখোঁজ । ঘটনার তিন বছর পর জুবেল আজ আপনজনদের কাছে। জুবেলের পরিবারে এখন বইছে আনন্দের বন্যা।
জুবেল আহমদ জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের ডেমারগ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে। নিখোঁজ জুবেল আহমদের খালু সেলিম আহমদ জানান, সুরুজ আলী পেশায় একজন কৃষক। জুবেল তার একমাত্র সন্তান। হারিয়ে যাবার সময় সে ডেমারগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বাড়ির পাশে সড়কের বাজারে গিয়েছিল বাবার সাথে। হঠাৎ হারিয়ে যায় জুবেল। তারপর অনেক খোঁজাখুজি করে জুবেলকে কোথাও না পেয়ে তার মা বাবা যখন পাগল প্রায় তখনই জুবেলের সন্ধানের খবর আসে। সে পঞ্চগড় জেলার জলাপাড়ার আহসানিয়া মিশন শিশু নগরীতে রয়েছে। জুবেল ঠিকমত নিজের বাড়িঘরের ঠিকানা বলতে না পারলেও তার বাবার নাম এবং জকিগঞ্জের কথা বলতে পারে আহসানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষের কাছে। আহসানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষ জুবেলের ছবিসহ বিষয়টি জকিগঞ্জ থানাকে অবহিত করে। জকিগঞ্জ থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম বিষয়টির দায়িত্ব নেন। তিন বছর আগে করা জুবেলের বাবার জিডির সাথে আহসানিয়া মিশনের পাঠানো তথ্যের মিল পাওয়ায় সহজেই জুবেলের পরিবারকে বিষয়টি অবগত করা হয়। জুবেলের বাবা ও খালু শনিবার পঞ্চগড় পৌঁছেন। শনিবার পঞ্চগড় সদর থানা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জুবেলকে পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হয়। রবিবার সকালে সে আপন ঠিকানা জকিগঞ্জে আপনজনদের কাছে ফিরে আসে। আহসানিয়া মিশন পঞ্চগড়ের সমাজকর্মী আব্দুল মালেক সরকার জানান, ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল আহসানিয়া মিশনের সমাজকর্মীরা জুবেলকে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে পথ শিশু হিসেবে খুঁজে পান। আহ্ছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সমাজকর্মী মোছা: রোকসানা আক্তার এর সাথে কমলাপুর রেল স্টেশনে শিশু মো: জুবায়েলের দেখা হয় ও তার সাথে কথা হয় এবং তার সমস্ত কথা সমাজকর্মীকে খুলে বলে। সমাজকর্মী তাকে শিশু নগরীর কার্যক্রমের কথা বলে এবং শিশু জুবায়েল একথা শুনে শিশু নগরীতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করে। ঢাকায় জুবেল বোতল, পলিথিন, ভাঙ্গাড়ি টোকায় আবার কখনো ভিক্ষা করে। মাঝেমধ্যে অন্যের জিনিসও চুরি করে। কখনো পুলিশের লাথিগুতা, কখনো বা জনগনের মার খেতে হয় এই ছোট্ট শিশু জুবায়েলকে। এভাবে প্রায় এক বছর রেলস্টেশনে জীবন অতিবাহিত করে। হারানোর দুই বছর আগে জুবেলের মা মারা যান। তারপর থেকে তার খালা ফখরুন বেগম তাকে তাকে মার আদরে লালন পালন করেন।
শিশু জুবেলকে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য ঢাকায় অবস্থিত পাইকপাড়ায় আহসানিয়া মিশনের অস্থায়ী সেল্টারে রাখা হয়। সেখান থেকে একই বছরের ৬ জুন পঞ্চগড়ে অবস্থিত আহ্ছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে নিয়ে আসা হয় এবং ভর্তি করা হয়। শিশু নগরীতে আসার পর সে আবারও আগের মত ভাংচুর শুরু করে, অন্য শিশুদের মারধর করে ও অন্যের জিনিস চুরি করে এবং ক্লাসে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এরপর তাকে বিভিন্ন কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে তার মানসিক অবস্থা পরিবর্তন করা হয়। আস্তে আস্তে সে ক্লাসে যেতে শুরু করে এবং শিশু শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম শ্রেণিতে চতুর্থ স্থান অধিকার করে।
শিশু নগরীর সমাজকর্মী শিশু মো: জুবায়েলের ভাষ্যমতে তার পরিবারের ঠিকানা অনুযায়ী পোস্ট অফিসের মাধ্যমে জকিগঞ্জ থানায় একটি চিঠি পোস্ট করে। জকিগঞ্জ দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ এর সহযোগীতায় উক্ত ঠিকানা অনুযায়ী খোঁজাখুজির পর তার পরিবারের সন্ধান পায় এবং আহ্ছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সেন্টার ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করে। গত ২ এপ্রিল তার বাবা মো: সুরুজ আলী আহ্ছানিয়া মিশন শিশু নগরী, পঞ্চগড়ে আসে এবং থানায় জিডি করার মাধ্যমে শিশুটিকে তার পরিবারে ফেরত নিয়ে যায়।
জুবেলের বাবা জানান, সংবাদ পেয়ে শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় আহসানিয়া মিশনে যাই। জুবেল আমাদের দেখে চিনতে পারে এবং আমার কোলে আসে। তিনি আহসানিয়া মিশনসহ তার ছেলেকে প্রাপ্তিতে যারা সহায়তা করেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।