
সোমবার, ৬ নভেম্বর ২০১৭
প্রথম পাতা » জাতীয় সংবাদ | নারী ও শিশু নির্যাতন | প্রেম / পরকিয়া | বক্স্ নিউজ | শিরোনাম » মায়ের সম্মতিতে মেয়েকে হত্যা
মায়ের সম্মতিতে মেয়েকে হত্যা
স্টাফ রিপোর্টার :
‘রাত তখন আড়াইটা। সবাই ঘুমে নিমগ্ন। শুধু জেগে ছিল আরজিনা ও তার পরকীয়া প্রেমিক শাহীন মল্লিক। ঘরের বাইরে খোলা ছাদে এসে তারা খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলে। কলাপসিবল গেটের নিচে পানির পাম্পের পাশে একটি ছোট লম্বা কাঠের লাঠি আগে থেকেই রেখেছিল শাহীন। তখন সে লাঠিটি নিচ থেকে নিয়ে আসে।
এসময় ঘরে ঢুকে ঘুমে নিমগ্ন আরজিনার স্বামী জামিল শেখকে মাথায় আঘাত করে। আঘাতটি মাথার এক কোনে লেগে পিচলে যায়। চিৎকার দিয়ে জামিল ঘুম থেকে উঠে বসে। রক্তাক্ত মাথায় হাত দিয়ে তাকে মারার কারণ জিজ্ঞাসা করে। এসময় ঘুম থেকে উঠে যায় জামিল ও আরজিনা দম্পত্তির নয় বছর বয়সী মেয়ে নুসরাত। নুসরাত শাহীন মল্লিকে প্রশ্ন করে, ‘শাহীন আংকেল আমার আব্বুকে মারছো কেন’? এসময় শাহীন জামিলের মাথায় পরপর একাধিক আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ভয়ে জড়োসড়ো হওয়া নুসরাত তখন বিছানার এক কোণে চলে যায়। আরজিনা তখন তার মেয়েকে বাইরে নিয়ে আসে। শাহীনও ঘরের বাইরে বের হয়ে আসে। শাহীন আরজিনাকে বলে যে, আমি জামিলকে হত্যা করলাম তা তো নুসরাত জানলো। এখন কী হবে? এসময় আরজিনা নিজে বাঁচার জন্য তার একমাত্র মেয়েকে হত্যার জন্য পরকীয়া প্রেমিক শাহীনকে আদেশ দেয়। তখন শাহীন নুসরাতকে ফের ঘরে ঢুকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। মায়ের সম্মতিতেই নুসরাতকে হত্যা করে শাহীন মল্লিক।’
গতকাল সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার একেএম মুস্তাক আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে বাড্ডার ময়নারবাগ কবরস্থান রোডের ৩০৬ নম্বর পাঠান ভিলার তৃতীয় তলায় বাবা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, গাড়িচালক জামিল শেখ (৩৮) ও মেয়ে নুসরাত জাহান (৯)। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরজিনা বেগমকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত জামিলের ভাই শামীম শেখ বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় জামিলের স্ত্রী আরজিনা বেগম (২৯) ও আরজিনার পরকীয়া প্রেমিক ভাড়াটিয়া শাহীন মল্লিককে (৩৭) আসামি করা হয়। এ মামলায় দুই আসামিকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত জামিলের স্ত্রী আরজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে ঘটনার মোটিভ জানা যায়। খুনের সঙ্গে ব্যবহৃত একটি কাঠের লাঠি এবং একটি গামছা উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, বর্তমান যে বাসাটিতে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এর আগের আরেকটি বাসায় ভাড়া থাকতো জামিল শেখ। ওই বাসার অন্য ভাড়াটিয়া শাহীন মল্লিকের সঙ্গে জামিলের স্ত্রী আরজিনার পরিচয় হয়। পরিচয় থেকেই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেম থেকে তাদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি আরজিনার স্বামী জামিল শেখ এবং শাহীন মল্লিকের স্ত্রী মাসুমা কেউ জানতো না।
তিনি আরও জানান, গত ৪ মাস ধরে ময়নারবাগ এলাকায় নতুন একটি বাসা ভাড়া নেন জামিল শেখ। কৌশলে ওই বাড়ির একটি কক্ষ সাবলেট দেন আরজিনা তার পূর্ব পরিচিত শাহীন মল্লিককে। এতে তাদের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হয়। কিছুদিন আগে আরজিনা শাহীনকে জানায়, তার স্বামী জামিলকে তালাক দিয়ে তার সঙ্গে সংসার বাঁধবে। কিন্তু, শাহীন জামিলকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানায়।
তিনি আরও জানান, ‘ঘটনার দিন রাত আড়াইটার দিকে সবাই ঘুমে ছিল। এসময় ঘরের বাইরে এসে খোলা ছাদে এসে শাহীন ও জামিল খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। শাহীন নিচ থেকে একটি কাঠের লাঠি নিয়ে আসে। তখন শাহীন ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় আরজিনার স্বামী জামিল শেখকে মাথায় আঘাত করে শাহীন। কিন্তু, আঘাতটি মাথার এক কোনে লেগে পিঁলে যায়। চিৎকার করে জামিল ঘুম থেকে উঠে বসে। এসময় ঘুম উঠে যায় জামিল ও আরজিনা দম্পত্তির নয় বছর বয়সী মেয়ে নুসরাত।
গুলশান জোনের ডিসি আরও জানান, নুসরাত শাহীন মল্লিকে প্রশ্ন করে‘ শাহীন আংকেল আব্বুকে মারছো কেন’? এসময় শাহীন জামিলকে মাথায় পরপর একাধিক আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে শাহীন ঘরের বাইরে বের হয়ে আসে। শাহীন তার পরকীয়া প্রেমিক আরজিনাকে বলে যে, আমি জামিলকে হত্যা করলাম তাতো নুসরাত জানলো। এখন কী হবে? এসময় আরজিনা তার একমাত্র মেয়েকে হত্যার জন্য তার পরকীয়া প্রেমিক শাহীনকে নির্দেশ দেয়। তখন শাহীন ফের ঘরে ঢুকে নুসরাতকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
বিষয়টি পরে টের পায় শাহীনের স্ত্রী মাসুমা। এরপর শাহীন ও মাসুমা দম্পত্তি ঘরে তালা মেরে খুলনায় চলে যায়। তবে পরকীয়ার বিষয়টি মাসুমা জানতেন না। আরজিনা বিষয়টি ডাকাতি বলে চালিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
তিনি আরও জানান, ঘটনাটি একজন ভাড়াটিয়া ফজরের নামাজ পড়তে বের হলে জানতে পারে। পরে তিনি বাড়ির মালিকে জানালে বাড়ির মালিক পুলিশকে জানায়। এসময় আরজিনাকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে এসব তথ্য জানা যায়। এ ঘটনায় আর কারও সম্পৃক্ততা আছে কি-না প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, তদন্ত অব্যাহত আছে। কারও সম্পৃক্ততা থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান, এডিসি (মিডিয়া) মো. ইউসুফ আলী, পুলিশের বাড্ডা জানের সহকারী কমিশনার আশরাফুল কবীর ও বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী প্রমুখ।